পোষ্য কোটা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধের ঘটনায় ১২ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি
পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে দুজন উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ প্রায় ২৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১২ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার ঘটনায় ১২ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে রাবির জনসংযোগ প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
১২ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর এফ নজরুল ইসলামকে। কমিটিকে যত শিগগিরই সম্ভব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি, জাতীয়তাবাদী সহায়ক কর্মজীবী পরিষদ ও সহায়ক কর্মচারী পেশাজীবী ফোরাম সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথক পৃথক আবেদনে জানায় যে, গত ২ জানুয়ারি সকাল প্রায় ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতপরিচয় বহিরাগত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে ভবনে কর্তব্যরত উপ-উপাচার্যদ্বয় ও কোষাধ্যক্ষসহ প্রায় ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটকে রাখে। তারা সেদিন রাত প্রায় ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে।'
এতে বলা হয়, 'সেসময় আবেগী ও বিব্রতকর অভিনয়ের মাধ্যমে ছড়ানো হয় প্রোপাগান্ডা, দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। ভেতরে আটকে থাকা অসুস্থ রোগী, নফল রোজাদার ও সন্তানসম্ভাবা নারীসহ বেশ কিছু মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়ে।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, 'তারা সেদিনের সেই ঘটনাকে দুঃখজনক, আইন বহির্ভূত, অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রশাসনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।'
এতে বলা হয়, 'তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর এফ নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে ঘটনার সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে যত শিগগিরই সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।'
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীরা। তারা গত একমাস ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় ওই ভবনের ভেতরে আটকে থাকা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনায় বসে পোষ্য কোটা বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়ার পর অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ পান।
দীর্ঘসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রাখার বিষয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার তখন বলেছিলেন, 'প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানোর আগে মাইকিং করে তাদের প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হতে বলেছিলাম কিন্তু তারা তা শোনেননি। এজন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্য়ন্ত পরে আর তাদের বের হতে দেওয়া হয়নি।'
এদিকে পোষ্য কোটা বাতিল হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তারা যে পদ্ধতিতে পোষ্য কোটা বাতিল হলো তার নিন্দা জানিয়ে পোষ্য কোটা পুর্নবহালের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।