ওষুধের ওপর বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহারে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
স্থানীয় পর্যায়ে ওষুধের দোকানে বা ফার্মেসিতে ওষুধের ওপর আরোপিত সর্বশেষ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) অপসারণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডাঃ সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওষুধের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী।"
একইসঙ্গে, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতেও কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি তারিখে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ওষুধের ওপর ভ্যাট ২.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
তবে এ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওষুধ শিল্প সমিতি।
৯ জানুয়ারি যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে ওষুধও রয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনের কয়েকটি ওষুধের দোকানে কথা বলে জানা গেছে, এখনও আগের দামই ওষুধ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ওষুধ কোম্পানি থেকে তারা কোনো নির্দেশনা পাননি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির টিবিএসকে বলেন, "ওষুধের ওপর যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের আবেদন করবো আমরা। এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেব।"
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায় বলতে ওষুধের দোকানগুলোকে বোঝানো হয়েছে। পণ্য পর্যায়ে বলা হলে উৎপাদক পর্যায়ের ভ্যাট বাড়ত। সুতরাং, বর্ধিত ভ্যাট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্রেতার কাছ থেকেই আদায় করবেন।
টিবিএস-এর সাথে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, "ওষুধের ওপর পারতপক্ষে কোনো ভ্যাট আরোপ না করাই ভালো। এটি যেহেতু জীবনরক্ষাকারী জিনিস, তাই এতে ভ্যাট থাকলে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। রোগ ধনী-গরিব সবারই হয়, তবে এ ধরনের ভ্যাটে গরিবরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।"
তিনি বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি এ ভ্যাট প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় তাহলে সেটি খুবই ভালো পদক্ষেপ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিৎ এ ভ্যাট প্রত্যাহার করা।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশিরা তাদের মোট স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ৭২.৫ শতাংশই নিজেরা বহন করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর তথ্যানুসারে, চিকিৎসার এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সে বছর প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়েছেন।
আর এই চিকিৎসা ব্যয়ের বেশিরভাগই চলে যায় ওষুধ কিনতে গিয়ে। বহিরাগত রোগীরা তাদের মোট ব্যয়ের ৫৪ শতাংশ খরচ করেন ওষুধ কেনা বাবদ, অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ রোগীদের ক্ষেত্রে এই খরচ ২৫ শতাংশ।