জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হল থেকে বহিরাগত যুবক আটক, শিক্ষার্থী বহিষ্কার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের একটি কক্ষ থেকে এক বহিরাগত যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, ''১৮ জানুয়ারি নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের ৩১৬ নং কক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী মোছা. অর্পা খন্দকার চাঁদনীর সহায়তায় বহিরাগত আশরাফুল আলম পারভেজ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীকে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ-২০১৮'-এর ৪ (১) (খ) ধারা অনুযায়ী ১৯ জানুয়ারি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।''
এরআগে, শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় আশরাফুল আলম পারভেজ ওরফে যাযাবর পারভেজকে অর্পার কক্ষ থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশুলিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করে।
আশরাফুলের বাড়ি চট্টগ্রাম। তবে বর্তমানে সে গাজীপুরে থাকে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের 'হিম উৎসব'-এর অনুষ্ঠান দেখা শেষে সে নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীর (অর্পা খন্দকার) সঙ্গে মধ্যরাতে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের তিনতলার একটি কক্ষে যান।
হল প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান হিম উৎসবে অনুষ্ঠান দেখা শেষে অর্পার সহায়তায় হলে প্রবেশ করেন আশরাফুল। অর্পা আশরাফুলকে হলের তৃতীয় তলায় তার কক্ষে নিয়ে যায়। তবে প্রবেশের সময় হল গেটের গার্ড ও অন্যান্যরা যাতে টের না পায়, সেজন্য আশরাফুল কপালে টিপ ও গায়ের চাদর মুড়িয়ে প্রবেশ করেন। কক্ষে গিয়ে চাঁদর খুলে ফেললে আশেপাশের কক্ষে থাকা ছাত্রীরা তাকে শনাক্ত করে।
হল সুপার নাদিয়া সুলতানা বলেন, 'হলের মেয়েরা ওই ছাত্রীর রুমে সেই পুরুষের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমাকে জানালে তৎক্ষণাৎ আমি হলের খালাকে সঙ্গে নিয়ে রুমে যাই। দরজা খোলার পর আমি তাকে খাটের উপরে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ আমি হল প্রভোস্টকে জানাই।'
বহিরাগত আশরাফুল বলেন, 'আমরা দুইজন ভালো বন্ধু। সাত বছরের বন্ধুত্ব। দুজনেই লালন ভক্ত। তাকে আমি বিয়ে দিয়েছি। আমি হিম উৎসবে বেড়াতে এসেছি। হলে আসার সময় আমি কপালে টিপ পড়ে মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে হলে প্রবেশ করি।'
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অর্পা খন্দকার বলেন, 'আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু। হিম উৎসবে সে এসেছিল। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় তাকে হলে নিয়ে এসেছি।'
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বহিরাগত যুবক আটক হওয়ার খবর পেয়ে হলে আসি এবং প্রক্টোরিয়াল বডিকে বিষয়টি অবগত করি। পরে প্রক্টোরিয়াল বডি আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে ওই যুবককে হস্তান্তর করে। আর এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত আমরা তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।'
ছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদারে দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে আসে।
মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের হল ও সার্বিকভাবে নারীর নিরাপত্তা জোরদার, সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার, অভিযুক্ত নারী ও পুরুষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, রাতের বেলা বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, জাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী 'হিম উৎসব' অনুষ্ঠিত হয়।