বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা চালুর দাবি, গাজীপুরে শ্রমিকদের গণসমাবেশ
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্টিয়াল পার্কের ভেতরে অবস্থিত বন্ধ ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণে বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার তেতুইবাড়ি এলাকার সানসিটি মাঠে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তাদের দাবিগুলো হলো- বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভেতরের বন্ধ সব ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা, এলসি খুলে দেওয়া এবং অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
সমাবেশে বেক্সিমকোর কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকাবাসীও গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বক্তারা।
কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তাদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হচ্ছিল না। শ্রমিকরা ঘনঘন আন্দোলন করছিল। এসব কারণে সরকার ঋণ দিয়ে শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করে।
পরে গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও কারখানার নামে ব্যাংকে পর্যাপ্ত ঋণ খেলাপি থাকায় আর পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বেক্সিমকো টেক্সটাইল লিমিটেড ও গার্মেন্টসের ১৬টি প্রতিষ্ঠানে ১৬ ডিসেম্বর থেকে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক বন্ধ থাকবে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পক্ষ থেকে ১৫ ডিসেম্বর একটি নোটিশ দেওয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়, বেক্সিমকোতে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, বর্তমানে কারখানায় কোনো কাজ না থাকায় ১৬ ডিসেম্বর থেকে শ্রম আইন অনুযায়ী লে-অফ থাকবে। লে-অফ থাকাকালে শ্রমিকদের সশরীর কারখানায় এসে হাজিরা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
শ্রমিকরা জানায়, কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়ার পর সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ওই কারখানার শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভ কর্মসূচীর বদলে সর্বশেষ গত ১৪ জানুয়ারী ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ বৃহৎ মানববন্ধন কর্মসূচির পালন করেছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশাল গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কারখানার শ্রমিক হাদি ইসলাম বলেন, 'আমরা কাজ হারিয়ে বেকার খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছি। আমাদের কারখানার ৪২ হাজার শ্রমিক এখন খুব সংকটের মধ্যে আছে। আমরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।'
আরেক শ্রমিক জুলহাস বলেন, 'আমাদের পরিবারের সকলে এখন অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আমরা অন্য কোথাও কাজ পাচ্ছি না। আমাদের গত মাসের বেতন কম দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, কারখানা খুলে দেওয়া হোক।'
কায়সার নামের এক শ্রমিক বলেন, 'ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে দেওয়া হলে আমরা বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। বর্তমানে হাজার হাজার শ্রমিক এখন আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। সরকারের কাছে আবেদন জানাই আমাদের কারখানা খুলে দিন। কারখানার ৪২ হাজার শ্রমিক আমরা সকলেই অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছি।'
আন্দোলন অংশ নেওয়া শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, 'আমরা না খেয়ে মারা যাচ্ছি। কয়েক মাস ধরে আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ আছে, খুলতেছে না। আমরা কি অবস্থায় আছি সেটা কি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না?'
আরেক শ্রমিক রাজিয়া সুলতানা বলেন, 'বেসিক বেতনে টাকা দিয়ে আমরা বাসা ভাড়া খাওয়া-দাওয়া খরচ জোগাড় করতে পারছি না। সংসারের পরিবার পরিজনের সদস্যদের নিয়ে আমাদের খুব অভাব-অনটনে দিন যাচ্ছে। আমরা চাকরি রক্ষা না শুধু আমাদের পরিবার রক্ষার জন্য এখানে আন্দোলনে আসছি।'
শিল্প পুলিশ-২ এর এসপি একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, 'বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের এলসি খুলে দেওয়া, ব্যাংকিং সুবিধা চালুসহ বেশ কিছু দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করা হচ্ছে। তারা মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছেন, কিছু শ্রমিক সড়কে দাড়ানোর কারণে সাময়িক যান চলাচল বিঘ্নিত হলেও সমাবেশ হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।'