ওমরাহ যেতে হঠাৎ মেনিনজাইটিস টিকা বাধ্যতামূলক, দেশে টিকার সংকটে বিপাকে যাত্রীরা
ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিস টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশ থেকে সৌদি যেতে ইচ্ছুক যাত্রীরা।
সৌদি সরকারের পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও ওমরাহ/ভিজিট ভিসায় যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিস টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। হঠাৎ করে সৌদি সরকার ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন সৌদিগমনেচ্ছু লোকের।
দেশে ইতোমধ্যেই সংকট দেখা দিয়েছে মেনিনজাইটিসের টিকার। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভও করেছেন সৌদি গমনেচ্ছুরা।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ওমরাহ এবং ভিজিট ভিসায় সৌদি ভ্রমণে ইচ্ছুকদের ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে অবশ্যই মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং টিকা নেওয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। তবে এ নির্দেশনা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। নির্দেশটি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের মহাপরিচালক ফরহাদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, হজযাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক, তবে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ওমরাহ যাত্রীদের জন্যও এটি বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে হঠাৎ করেই মেনিনজাইটিস টিকার চাহিদা বাড়ায় হাসপাতালগুলো তা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেনা। ফলে টিকা না পেয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন সৌদিগামী যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় ৩০০ জন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
এ সময় তারা জানান, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তাদের বলা হয়েছে, স্কয়ার হাসপাতালে গেলে টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু স্কয়ারেও প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি টিকা দেওয়া হচ্ছে— যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রবাসীরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তবে আগের দিন আমাদের ভ্যাকসিন ফুরিয়ে যাওয়ায় আমরা দিতে পারিনি।"
তিনি আরও বলেন, "এই ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে সারাদেশেই এর ঘাটতি রয়েছে।"
মেনিনজাইটিসের টিকা বাংলাদেশে আমদানি করে রেডিয়েন্ট ফার্মা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, নতুন করে টিকা আনতে আরও বেশ কয়েকদিন দিন সময় লাগবে। এই মুহূর্তে তাদের কিছুই করার নেই।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো: নাসের শাহরিয়ার জাহেদী টিবিএসকে বলেন, "হঠাৎ করে আমাদের কাছে মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিনের ডিমান্ড দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী আমরা এতোদিন ভ্যাকসিন সাপ্লাই দিচ্ছিলাম। ওমরাহ হজের জন্য ডিমান্ড বেড়ে যাওয়াতে আমরা তৎক্ষণাৎ ফাইজারকে বলেছি আরও ১০ হাজার ভ্যাকসিন দিতে।"
"ফার্স্ট কনসাইনমেন্টে ৫ হাজার ভ্যাকসিন আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আসবে। আর ১০-১৫ দিন পর বাকি ৫ হাজার ভ্যাকসিন আসবে," যোগ করেন তিনি।
মো: নাসের শাহরিয়ার আরও বলেন, যদি দুই থেকে তিন মাস আগে এই টিকার চাহিদা দেওয়া হত, তাহলে আমরা সে ব্যবস্থা করতাম। হঠাৎ করে ডিমান্ড চলে আসায় ফাইজারের সাথে যোগাযোগ করে আমরা ১০ হাজার সিকিউর করতে পেরেছি। প্রয়োজন হলে আমরা আরও ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করবো।"
"হজ এজেন্সি বা সরকারের যারা কনসার্ন অথোরিটি আছে তারা যদি আমাদের ডিমান্ড দেয়, আমরা সে অনুযায়ী ভ্যাকসিন আনব," যোগ করেন তিনি।
আনঅফিশিয়াল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব গেছেন।
রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান জানান, "জেনারেল মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন আগে কম নিতো মানুষ। বছরে আনুমানিক ৫-৬ হাজার ভ্যাকসিন আনতাম আমরা। এখন প্রায় ২ লাখ মানুষ হজে যাবে, তাদের জন্য ভ্যাকসিন আনতে হচ্ছে। আমাদের ভ্যাকসিনের দাম সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।"
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ শাখার যুগ্ম সচিব মো: মনজুরুল হক টিবিএসকে বলেন, "ওমরাহ যাত্রীদের এই টিকা ব্যক্তি উদ্যোগে নিতে হবে। যারা হজ করতে যান, তাদের বাধ্যতামূলক মেনিনজাইটিস টিকা নিতে হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই টিকা হজযাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে। তবে ওমরাহ যাত্রীদের টিকা সরকার সরবরাহ করবেনা, তারা যেকোনো প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে নিজেরাই নেবেন এবং সার্টিফিকেট পাবেন।"
দেশে এখন কত ওমরাহ যাত্রী আছেন, তার কোনো সরকারি তথ্য এই মুহূর্তে নেই। দেশে হজযাত্রী কমলেও ওমরাহ যাত্রী বাড়ছে বলে জানান মনজুরুল হক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, মেনিনজাইটিস হল মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের টিস্যুর প্রদাহজনিত সমস্যা। এটি সাধারণত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন ওতে পারে।
মেনিনজাইটিস বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ থেকে মানুষে এই সংক্রমণ ছড়ায়। এছড়া আঘাত, ক্যান্সার এবং ওষুধের কারণেও এ রোগের সংক্রমণ হতে দেখা যায়, যদিও তা সংখ্যায় অনেক কম।
এরমধ্যে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস হল সবচেয়ে বিপজ্জনক। এটি সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। মেনিনজাইটিস যেকোনো বয়সী মানুষেরই হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া মেনিনজাইটিসের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম সুরক্ষা ব্যবস্থা হলো এর টিকা নেওয়া।