মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ
২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার কর্মীর পক্ষে আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শ খানেক কর্মী। সকালে কারওয়ান বাজার মোড়ে বিক্ষোভ করলেও, পুলিশ সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ায় পরে ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
সকাল ৯টায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় ১৫০ কর্মী কারওয়ান বাজার মোড়ের সার্ক ফোয়ারা চত্বরের সামনে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে কারওয়ান বাজার থেকে পান্থপথ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তবে পুলিশ সকাল ১১ টা ১০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সড়ক অবরোধে অংশগ্রহণকারীদের সরিয়ে দেয়। তারপর যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এরপর বেলা ১২টার দিকে শাহবাগ থেকে মিছিল করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন। এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা সড়ক অবরোধ করেছি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দাবি শোনা হয়, ততক্ষণ এখানেই থাকব।'
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন মাসে জানা যায় যে, প্রায় ১৭ হাজার কর্মী সময়মতো টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।
মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে অভিযোগকারী কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর তৎকালীন মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, মন্ত্রণালয়ে প্রায় আড়াই হাজার কর্মী অভিযোগ করেছিলেন, এবং তাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কতজন কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এটি দেখার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিনের কাছে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সকালে কারওয়ান বাজারে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারী মঈন উদ্দিন বাবু বলেন, আমরা মালয়েশিয়ার কাজের জন্য এজেন্সিগুলোকে টাকা দিয়েছি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের চাকরি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে কোনো সমাধান না হওয়ায় আজ বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দ্রুত সমস্যার সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে তারা—যে-সব কর্মী নির্ধারিত সময়ে যেতে পারেননি, তাদের দ্রুত মালয়েশিয়ায় পাঠানোর দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে হবে; যাদের ই-ভিসা হয়েছে কিন্তু ম্যানপাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এবং যাদের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠাতে হবে; ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে আটকে থাকা সকল কর্মীকে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে একটি রেমিট্যান্স ফাউন্ডেশন গঠন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া, সরকার কর্তৃক আটকে থাকা কর্মীদের পাঠানোর সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার সর্বশেষ ঢাকা সফরের সময় এই কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।