ঢাবি থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তের পর ৭ কলেজের ভবিষ্যৎ কোনদিকে?
রাজধানীর শীর্ষ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্তে চলতি সেশনের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
আবার আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে আইন, বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কবে নাগাদ হবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গতকাল (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যহারের কয়েক ঘণ্টা পর, সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা চেয়ে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আবদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে, তার একটি বিস্তারিত রূপরেখা চাই।"
এদিকে, ঢাবির ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা না করেই নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘোষণা দিয়েছে, আমার সাথে আলোচনা করে দেয়নি।"
চলতি সেশন অর্থাৎ, ২০২৪-২০২৫ থেকেই ঢাবির অধীনে এই কলেজগুলোতে আর ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সাতটি সরকারি কলেজ হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
এসব কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি। এ কলেজগুলোতে প্রতি সেশনে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, "এ বছর থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জটিলতা আরও বাড়াবে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "ঢাবির এমন সিদ্ধান্তে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের ভিক্টিম করা যাবে না। ভর্তি না নিলে শিক্ষার্থীরা এখন কোথায় ভর্তি হবে? এটা অনিশ্চয়তা তৈরি করলো। এটা শিক্ষার্থী বিরোধী সিদ্ধান্ত। অন্তত ২ সেশনের সময় দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।"
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ইউজিসি এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে। এরজন্য কয়েকটি মডেল তৈরি করে কাজ করা হচ্ছিল।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "ছাত্রদের সাথে আলোচনা করেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার মডেল ঠিক করা হচ্ছিল। আমরা একই সাথে অনেকগুলো মডেল নিয়ে কাজ করছিলাম।"
তিনি বলেন, "কিন্তু দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর ঢাবি হঠাৎ বিবৃতি দিয়েছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থী আর ভর্তি করা হবে না, ইউজিসির মাধ্যমে ভর্তির বিষয়ে কিছু একটা করা হবে। এখন ইউজিসি তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না। ইউজিসির ভর্তি করার কোনো ক্ষমতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ছাড়া আগাম ভর্তির কোনো সুযোগও নেই।"
বিশ্ববিদ্যালয় গঠন সময়সাপেক্ষ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে গেলে তার বিধি-বিধান লাগে, আইন লাগে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে সনদ নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি, অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের যাচাই-বাচাই শেষে সে সনদ নিতে হয়।"
"এখন হঠাৎ করে যে অচলাবস্থা তৈরি হলো, তার থেকে উত্তরণে আমাদের আবার আলাপ-আলোচনা করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "সাত কলেজ নিয়ে এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে কত দিনে কী করতে পারবো তা বলতে পারছি না।"
যেভাবে অধিভুক্ত হয় ঢাবির সাত কলেজ
১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির আগে সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত ছিল।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়।
২০১৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ফের অধিভুক্তি পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজকে পুনরায় ঢাবির অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সাত কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাবির অধিভুক্ত হয়।