গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১০৭ জন গ্রেপ্তার
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/10/14/arrest.jpg)
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এপর্যন্ত মোট ১০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত গত তিনদিনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোজাম্মেল হকের আত্মীয়-স্বজনও রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের মেট্রো সদর থানায় নতুন যোগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, মহানগর পুলিশের বিভিন্ন টিম এ ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এবং অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। একই সাথে অপারেশন ডেভিল হান্টের অধীনে ঘটনার সাথে জড়িত ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দাক্ষিণ খান এলাকায় আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আটকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হযন। তাদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান আরো জানান, এ ঘটনায় শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুরের আহবায়ক মো: আব্দুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে আমজাদ হোসেন মোল্লা নামের আওয়ামী লীগের নেতাকে। তিনি মোজাম্মেল হকের ভাতিজা।
তিনি আরো জানান, গেল শুক্রবার মারধরের ঘটনার পর রাতেই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর শনিবার রাতে আরো ১৮ জন, এবং রোববার রাতে ৭৪ জনসহ মোট ১০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, যাদের নির্দেশনায় এ হামলা সংঘটিত হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিনভর বিক্ষোভ-আন্দোলন কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে থাকে গাজীপুর। হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিতে— ঢাকা থেকে আসেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।
দিনভর আন্দোলনের পরে শনিবার বিকেলে জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করীম খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এসময় তিনি জানান, রাতেই ঘটনায় জড়িত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা জানানোর পরও ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টা দেরী হওয়ায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তৎকালীন সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সময়মতো পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার দায় স্বীকারে করে দায়ীদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন কমিশনার। পরে আন্দোলনকারীরা তা মেনে নেন।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গাজীপুরের রাজবাড়ীর সামনে সড়কে গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছঅন। শিক্ষার্থীর নাম মোবাশ্বের হোসেন। তিনি মহানগরীর হাড়িনাল এলাকার আলী আহমেদের ছেলে। ঘটনার পর তাকে উদ্ধার করে— গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনায় আরো একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনার পর সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সরকার।