৩ জানুয়ারি পর্যন্ত জাপানি মায়ের সঙ্গেই থাকবে দুই শিশু: সুপ্রিম কোর্ট
জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফের ১১ ও ৭ বছর বয়সী দুই মেয়ে আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এই শুনানির আগে গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মেয়েদেরকে দুই দিন গুলশানে তাদের মায়ের সাথে থাকার নির্দেশ দেন। সে আদেশ অনুযায়ী, গত ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শিশুরা মায়ের সঙ্গেই ছিল।
তবে শিশুদেরকে তাদের মায়ের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়নি।
সোমবার এরিকোর আইনজীবী বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনেন।
ওই দিনই আপিল বিভাগ দুই মেয়েসহ ইমরান শরীফকে তলব করেন।
সকাল ১১টার পর দুই মেয়েকে নিয়ে আপিল বিভাগে হাজির হন এই বাবা। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ দুই শিশুকে চেম্বারে ডেকে পাঠান।
তাদের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কথা বলার পর তাদের অভিভাবকদেরও বিচারকের চেম্বারে ডাকা হয়। এরপর বিচারক উভয় পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে বসেন।
আদালত সোমবার রাতে শিশুদেরকে তাদের মায়ের কাছে রাখার নির্দেশ দেন এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশুদের বাবা আদালত অবমাননা করেছেন বলে মন্তব্য করেন।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর এরিকোর দুই শিশুকন্যা বাংলাদেশে তাদের বাবার জিম্মায় থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ৭ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে আপিল করেন তাদের জাপানি মা এরিকো।
রায়ে বলা হয়, মা নাকানো এরিকো প্রতি তিন মাস পরপর জাপান থেকে বাংলাদেশে এসে অন্তত দশ দিন করে দুই মেয়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। ওই দশ দিনের থাকা-খাওয়া এবং জাপান থেকে আসা-যাওয়ার সব খরচ বহন করবেন তার প্রাক্তন স্বামী ইমরান শরীফ। অতিরিক্ত সময় যাওয়া-আসা এবং থাকার খরচ মা নিজে বহন করবেন।
এছাড়াও গত কয়েক মাস বাংলাদেশে থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য খরচের জন্য এরিকোকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে দশ লাখ টাকা পরিশোধ করতে ইমরানকে আদেশ দেন আদালত।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তিন মেয়ের বাবা-মা ইমরান ও এরিকো ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইনমতে বিয়ে করেন।
এরিকোর আইনজীবী জানান, ইমরান ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হতে তিনি ব্যর্থ হন। বিবাহবিচ্ছেদের প্রেক্ষিতে সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়।
তিন দিন পর ইমরান তার দুই মেয়েকে টোকিওতে তাদের স্কুলের বাসস্টপ থেকে তুলে নেন এবং এরিকোর সম্মতি ছাড়াই মেয়েদের একটি ভাড়াবাড়িতে নিয়ে যান। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
পরবর্তীতে গত আগস্টে নাকানো তার দুই মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।