জাপানি মেয়েসহ আত্মগোপনে থাকা বাবাকে পুলিশে হস্তান্তর
আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে তার নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে আত্মগোপন করায় বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফকে আটক করা হয়েছে। এর আগে তার দুই সন্তানকে মায়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
বুধবার ভোরে রাজধানীর কালাচাঁদপুর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় র্যাবের একটি দল। এরপর তাদেরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জাপানি শিশুটির নিখোঁজ বিষয়ে করা জিডি নিয়ে কাজ করা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মামুন মিয়া জানান, শিশুটিকে তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন অ্যান্ড ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে গেছেন।
"আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি সেখানে থাকবে," যোগ করেন তিনি।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, "আদালতের রায় ছিল জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে দুই সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। কিন্তু রায় প্রতিপালনে থানা পুলিশ বাবাসহ ছোট মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিল না।"
"আদালতের রায় উপেক্ষা করে মায়ের কাছে সন্তানকে হস্তান্তর না করে ছোট মেয়েসহ বাবা আত্মগোপনে চলে যান এমন তথ্য পায় র্যাব। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুর এলাকায় আত্মগোপন করা বাবা ইমরান শরিফকে ছোট মেয়েসহ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে জাপানি মা নাকানো এরিকোও বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে তিনি কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তা জানা যায়নি।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার একটি পারিবারিক আদালত রায় দেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরিফের দুই সন্তান তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ আদেশ দেন।
নাকানো এরিকোর এক আইনজীবী বলেন, "আদালত ইমরান শরীফের দুই সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার জন্য দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে। সুতরাং, দুই সন্তান তাদের মায়ের সাথেই থাকবে এবং তিনি তার কন্যাদের জাপানেও নিয়ে যেতে পারবেন।"
আদালত বলেছে, তারা শিশু দুটির মঙ্গলের দিক চিন্তা করে এ আদেশ দিয়েছে।
বিচারক বলেন, নাবালক দুই শিশুর থাকার বাসস্থান জাপানেই। তাদের মা একজন জাপানি চিকিৎসক। মায়ের সঙ্গে থাকলে তাদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা থাকবে।
অন্যদিকে ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলি বলেছেন, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশু দুটিকে বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
২০০৮ সালে জাপানে এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি কন্যাসন্তান আছে। বিয়ের বারো বছর পর ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান।
স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদের চিঠি দেওয়ার পর সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে জাপানের পারিবারিক আদালতে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি মামলা করেন ইমরান। ওই বছরই বড় ও মেজো মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।
কিন্তু দুই মেয়েকে ফিরে পেতে একই বছরের ১৯ আগস্ট ঢাকায় এসে হাইকোর্টে রিট করেন মা এরিকো।
সে বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়, ইমরান ও এরিকোর জাপানি কন্যারা তাদের বাবার সাথে থাকবে।
মামলা চলমান অবস্থায় গত ২৪ ডিসেম্বর মেয়েদের নিয়ে দেশ ছাড়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এরিকোকে থামানো হয়। পরে এরিকো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি পারিবারিক আদালতে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চান।