চট্টগ্রামে র্যাব-চা শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ১৩
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার একটি চা-বাগানে 'সাদা পোশাকে' র্যাবের অভিযান চলাকালে র্যাব ও চা শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ র্যাব সদস্য ও আট চা শ্রমিক আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপল (৩০) কে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে র্যাবের গুলিতে মনতোষ নামে একজন চা শ্রমিক পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে চা বাগানের একজন কর্মকর্তা।
সোমবার রাতে উপজেলার ভূজপুর বারমাসিয়া চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষে আহত বাকি র্যাব সদস্যরা হলেন- আবদুস ছালাম (৪২), মোস্তাফিজুর রহমান (৩২), শাহীন আলম (৩০), মোমিনুল হোসেন (২৯)। তাদের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আহত আট চা শ্রমিকের মধ্যে মনতোষ নামে একজনের বিষয়ে জানা গেলেও বাকিদের নাম জানা যায়নি।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,"গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাওয়া খবরে সোমবার সন্ধ্যায় ভূজপুর বারমাসিয়া চা বাগান এলাকার একটি মদ তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় মদের মহালের মালিক সময় বিপ্লব(৩২)কে আটক করে নিয়ে আসতে চাইলে র্যাব সদস্যরা হামলার শিকার হন। এসময় তাদের আঘাতে পাঁচ র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন।"
"আহতদের মধ্যে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম সিএমএইচ ও পরে র্যাবের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা সিএমএইচ এ পাঠানো হয়। বাকিরা ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।"
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় র্যাবের একটি দল সাদা পোশাকে বারমাসিয়া চা বাগানে অভিযান চালায়। এসময় তারা চা বাগানের শ্রমিক চিত্তরঞ্জনকে আটক করে। তখন কিছু শ্রমিক ডাকাত এসেছে বলে বাগানের পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। (মূলত বাগানের অভ্যন্তরে কোন দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে সংকেত হিসেবে এই ঘন্টা বাঁজানো হয়)। এ সময় বাগানের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক শ্রমিক এসে র্যাব সদস্যদের ঘিরে তাদের উপর চড়াও হয়।
তবে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, সংঘর্ষ চলাকালে র্যাব সদস্যরা গুলি চালায়। এসময় র্যাব গুলি করলে মনতোষ (৫০) নামক এক ব্যক্তি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও ৭ শ্রমিক। তখন উত্তেজিত শ্রমিকরা র্যাবের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। পরে খবর পেয়ে ভূজপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ বিষয়ে জানতে বারমাসিয়া চা বাগানের ম্যানেজার মোহাম্মদ শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগানের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "অভিযান কালে র্যাব সদস্যরা সিভিল ড্রেসে ছিলেন। এসময় র্যাবের গুলিতে চা-শ্রমিক মনতোষ গুলিবিদ্ধ হন।"
এদিকে শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।
তিনি বলেন, "শ্রমিকরা পরিস্থিতি না বুঝে মাদককারবারীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে র্যাব সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা র্যাব ধর র্যাব ধর বলে স্লোগানও দেন। এই সব কিছুর ভিডিও আমাদের আছে। এই ঘটনার মূল হোতাদের ধরতে এখনো অভিযান চলছে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, "বারমাসিয়া চা বাগানে র্যাব ও চা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে জেনেছি। স্থানীয়রা আটজন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে আসলে কি ঘটনা ঘটেছে তা আমরা বিস্তারিত কিছু পাইনি। হাটহাজারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাহাদাত হোসেন, ভুজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।"