শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বয়কট করব না: তৈমুর
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ২১, ২২ নং ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।
তিনি জানিয়েছেন, বিগত নির্বাচনগুলোর মতো নির্বাচনের আগমুহুর্তে এবার আর সরে দাঁড়াবেন না তিনি।
শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সিরাজউদ্দৌলা মাঠে পথসভায় অংশ নেওয়ার আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি একথা জানান।
বিএনপির সাবেক এ নেতা বলেন, "২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে আমি নিজে সরে যাইনি। আমার দল বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় আমি দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলাম বলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এবার নির্বাচনে আমি জনগণের পক্ষ থেকে দাঁড়িয়েছি।"
তৈমুর বলেন, "হাতির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অতিরিক্ত ট্যাক্সের বোঝা আর বইতে চায় না। পানি সরবরাহ না করে ৩ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর থেকে মানুষ বাঁচতে চায়। পাশাপাশি মানুষ পরিষেবা থেকে সেবা চায়। মানুষ কাঙ্খিত সেবা পেতে ১৮ বছরের শোষণের পরিবর্তন চায়।"
এদিকে তৈমুরের নির্বাচনী প্রচারণায় বন্দর থানার ২১, ২২ নং ওয়ার্ডে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে জনসংযোগ করায় সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে প্রার্থীদের পক্ষে লিফলেট বিলি করতে দেখা যায়। কয়েকটি মসজিদে হাতি মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে লিফলেট বিতরণকালে বাধা প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে।
তবে ২১ ও ২২ নং ওয়ার্ডের জনগণের সাথে কথা বললে তারা জানান, তৈমুর শেষ মুহূর্তে চোখে পড়ার মতো নেতাকর্মী নিয়ে জনসংযোগ করেছেন। বিগত দিনগুলোতে তার সাথে লোকজন থাকলেও শুক্রবারের মতো এতো ছিল না।
তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ভীতিই কাজ করছে বেশি।
নগরীর বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তাদের অধিকাংশই বলছেন ভোট দিতে যাওয়ার আগ্রহ নেই তাদের। বিগত বছরগুলোতে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা হওয়ায় এবং ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে না পারায় আগ্রহ নেই তাদের। তবে সকালে যদি ভোটের পরিবেশ ভালো দেখেন তবেই তারা কেন্দ্রে যাবেন ভোট দিতে।
অধিকাংশই বলছেন প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থন যার দিকে থাকবে সেই এগিয়ে থাকবেন নির্বাচনে।
শুক্রবার সকালে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক নির্বাচন নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন। নানক কিছু সহকর্মী নিয়ে নির্বাচনের মাত্র দুদিন বাকি থাকতে বৃহস্পতিবার রাতে ডিসি-এসপির সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি এটা করে নির্বাচন নিয়ে ভোটার না হয়েও নাগরিকদের মধ্যে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তৈমুরের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক এ টি এম কামালের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তৈমুর বলেন, "তিনি (নানক) শুধু প্রভাবান্বিতই করেন নি, তিনি জনমনে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। এটা একজন উচ্চপদস্থ নেতা থেকে আমরা আশা এবং প্রত্যাশা করি না। এই ধরনের কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের জনগণ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি প্রত্যাশা করি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং ব্যবস্থা জারি করবেন তিনি।"
তৈমুর বলেন, "নানক বলেছেন তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন নাই কিন্তু তার বক্তব্য আর দেখা করার বিষয়ে সমন্বয় নেই। প্রথম কথা হচ্ছে যেহেতু তিনি নারায়ণগঞ্জের কোনো দায়িত্বে নেই সেহেতু তিনি নির্বাচনের আগ মুহুর্তে পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করতে পারেন না। আমি মনেকরি এটা অন্যায়।"
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হোটেলে সরকার দলীয় লোকজন থাকছে। সার্কিট হাউজ, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, ডাক বাংলোসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা এসে থাকছেন, নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করছেন। আইন অনুযায়ী, সরকারি গাড়ি, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউজ ব্যবহারের আইনগত বিধান নেই। এটি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন। এসব সরকারি স্থান ব্যবহার করে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকার দলীয় উচ্চপদস্থ নেতারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।"
তৈমুর বলেন, "সিদ্ধিরগঞ্জে আমার নির্বাচনী সমন্বয়ক জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রবির অফিস থেকে পোলিং এজেন্টদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ উধাও হয়ে গেছে।"
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, "আমরা ১৫ বছর ধরেই নিজ বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারছি না। নানাভাবে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।"