শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করলো পুলিশ
উপাচার্যের পদত্যাগদাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই পুলিশের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা দুই-তিনশ শিক্ষার্থীকে।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) গভীর রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানার এই মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে তিন দফা দাবিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে গত রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করলে এই সংঘাত বাধে। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও গুলি ছুঁড়ে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ২০০-৩০০ 'উচ্ছৃঙ্খল' শিক্ষার্থী পুলিশের কর্তব্য পালনে বাধা প্রদান করে। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেক্ষ করে। এছাড়া, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এতে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ ১০ জন পুলিশসহ আহত হন বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দিন পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলা দায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জালালবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন বলেন, 'এ ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি মামলা হয়েছে। ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হলেও কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।'
তবে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ মিথ্যে দাবি করে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, 'পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। গুলি ছুড়েছে। আমাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।'
গুলি ছুঁড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, 'পুলিশ কোনো গুলি ছুঁড়েনি। পুলিশ ওইদিন ক্যাম্পাসে গুলি আনেইনি।'
আন্দোলনে একাত্মতা আ. লীগের:
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে তা পূরণে কিছুটা সময় দেয়ার আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধানে পৌঁছা যায় সেই পথ খোলা রাখারও আহ্বান জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থলে হাজির হন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহাসহ আরও অনেকে।
এ সময় শফিউল আলম নাদেল বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। আমাদের দল ও সরকার আপনাদের পাশে আছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এই সংকট থেকে বের হয়ে আসার একটি পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।'
তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের দাবির প্রতি একমত। আপনাদের প্রাথমিক দাবিগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় সে চেষ্টা করব। তবে একটু সময় দিতে হবে। যাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসে সেই চেষ্টা চালাব।
আওয়ামী লীগ নেতারা পৌনে ২টার দিকে সভাস্থল ছেড়ে উপাচার্যর বাসভবনে যান। এর পর পরই বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা । তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিয়েছে।
সর্বশেষ পাওয়া সংবাদ অনুসারে, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার বাসভবনেই অবস্থান করছেন।
এরআগে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে জড়ো হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হল ঘুরে গোলচত্বরে এসে অবস্থান নেন তারা।