পানামা, প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ৬৯ বাংলাদেশির তথ্য হাইকোর্টে দাখিল
পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাম আসা ৬৯ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, "আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ বিভিন্ন সংস্থাকে ফাঁস হওয়া আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ব্যক্তি ও সংস্থার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে সহায়তা করেছি।"
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক হলফনামা আকারে হাইকোর্টে অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামসহ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
আগামী রোববার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত ৬ জানুয়ারি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ'র নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওইদনি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ৪৩ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম হাইকোর্টে দাখিল করেছিল দুদক। এরপরই আদালত এই নির্দেশ দেন।
বিএফআইইউ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অর্থপাচারের বিষয়ে তারা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান করে গত ৫ বছরে দুদক, সিআইডি, পুলিশ এনবিআরসহ অন্যান্য সংস্থাকে মোট ৪ হাজার ৫০৭ টি 'ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট' সরবরাহ করেছে। এগুলোর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৮৭ টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৬৭ টি, ২০১৮-২০১৯ এ ৫৫৩টি, ২০১৭-১৮ এ ১ হাজার ১৯৭টি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০৩টি রিপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলো এসব সংস্থার নেওয়া আইন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে।
ঢাকা থেকে অর্থ পাচারকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেন আবদুল আওয়াল মিন্টু, নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, তাবিথ আওয়াল, তাফসির আওয়াল, তাজওয়ার মোঃ আওয়াল, চৌধুরী ফয়সাল, আহমেদ সমির, ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনারস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড, মুসা বিন শমসের, ফজলে এলাহী, কে এইচ আসাদুল ইসলাম, জুলফিকার আহমেদ, ইমরান রহমান, এরিক জনসন অ্যান্ড্রিস উইলসন ডব্লিউএমজি লিমিটেড, ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, আমানুল্লাহ ছাগলা, মাহতবা রহমান, শাহনাজ হুদা রাজ্জাক।
চট্টগ্রাম থেকে মোহাম্মদ এ আওয়াল ও মোহাম্মদ মালেক এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে তাজুল ইসলাম তাজুল ও ফারুক পালওয়ানের নাম এসেছে।
এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের মুঘল ফরিদা, টেক্সাসের শহীদ উল্লাহ, মস্কোর মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, মাল্টায় মোহাম্মদ রেজাউল হক এবং আয়ারল্যান্ডের মাহমুদ হোসেন ও গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেম।
গত বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট দুদককে ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে 'প্রকৃত' অর্থপাচারকারীদের ধরতে কাজ করার নির্দেশ দেন।
আদালত বলেন, "যারা দেশের বাইরে 'বেগম পাড়া' নির্মাণ করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তারাই প্রকৃত অর্থপাচারকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"