এয়ারপোর্ট-গাজীপুর রুট: যানজটের ভোগান্তি কিছুটা কমবে এপ্রিলে
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর উত্তরা এলাকায় গাজীপুরমুখী পরিবহনগুলো থেমে থেমে চলছিল। ফলে এয়ারপোর্ট রোডের পুরো অংশেই যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এ যানজটের ফলে ভোগান্তিতে পরে বিভিন্ন গন্তব্যে বের হওয়া মানুষজন।
ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র টিবিএসকে জানিয়েছে, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণে টঙ্গীর ৩ কিলোমিটার এলাকায় খানাখন্দের কারণেই এ ভোগান্তি। তবে ওই অংশের কাজ এপ্রিল নাগাদ শেষ হবে তখন কিছুটা কমে আসবে এ রোডে চলাচলকারীদের ভোগান্তি।
বিআরটি প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সড়কটি সরু হয়ে যায়। যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাতেও কোথাও কোথাও নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। র্দীঘ দিন এই সড়ক সংস্কারও করা হয় না, ফলে সড়কের কিছু কিছু স্থান ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা।
ঢাকা ও গাজীপুর এলাকার যানজট কমাতে ২০১২ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায় 'গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-বিআরটি-গাজীপুর-এয়ারপোর্ট'। কিন্তু বারবার নকশা বদল, নতুন নতুন অবকাঠামো যোগ আর সমন্বয়হীনতায় চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্প নয় বছরেও শেষ করা সম্ভব হয় নি।
রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আবু সালেহ মুসা। গাজীপুরের কলেজগেট এলাকায় বসবাসরত মুসা প্রতিদিন রাজধানীর মহাখালীর অফিসে যান বাসে। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমি প্রতিদিন হাতে ২ ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হই। এরপরও সপ্তাহের একাধিক দিন লম্বা সময় বাসে বসে থাকতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে ৪ কিংবা ৫ ঘণ্টাও লেগেছে বাড়ি ফিরতে। জ্যামে পড়লে কিছু করার থাকে না আমাদের।"
আবু সালেহ মুসার মতো ভোগান্তিতে পড়েন এ রোডে চলাচলরত লাখো যাত্রী। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কিংবা টাঙ্গাইলগামী যাত্রীদের। ৩ ঘণ্টার যাত্রায় তাদের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময়ও লেগে যায়।
গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর-টঙ্গী অংশে দীর্ঘদিন ধরে যানজট ও সড়কের বেহাল দশাতে ভোগান্তির শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলো। যদিও যোগাযোগ সচিবের অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্বান্ত নিয়েছিলো তারা।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে আমাদের ট্রিপ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়াও বাসগুলো নষ্ট হচ্ছে ফলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এসব বিষয় আমরা সংশ্লিষ্টদের বারবার জানিয়েছি। কিন্ত আমাদেরকে কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি এখনো।"
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মো. ফয়জুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "বিআরটির নির্মাণকাজের জন্য রাস্তার অনেকটা তাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে এসব এলাকায় বিশেষ করে স্টেশন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ফলে পরিবহনগুলো ধীরে চলে। এসব বিষয়ে আমরা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। তারা অস্থায়ী সংস্কারের ব্যবস্থাও করেছেন।"
এদিকে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "যানযট শুধু টঙ্গী ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হচ্ছে। গাজীপুর চৌরাস্তার মোড়ে হতো, কিন্ত সেখানে এখন স্বাভাবিক। টঙ্গী এলাকার কাজ শুর হয়ে গেছে। এ অংশের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হলে আমরা এখানে ছয় লেনের সড়ক পাবো। এছাড়া বিআরটির নির্মাণকাজের জন্য বিভিন্ন সময় রাস্তার এক লেন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সব কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি শেষ হবে তখন এয়ারপোর্ট-গাজীপুর রোডে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।"