মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
করোনাভ্যাইরাসের ভ্যাকসিনেশন শুরুর এক বছর পরেও টার্গেটেড জনগোষ্ঠীর ২০% এর অধিক এখনো ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে আছে। ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক নয়- এমন জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনাই এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়া ও সন্ধ্যায় ভ্যাকসিন সেন্টার চালুর পরিকল্পনা সরকারের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা টিবিএসকে বলেন, "১২ বছরের ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ভ্যাকসিন পেয়েছে। এর মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কওমি মাদ্রাসার ৩০-৪০ লাখ শিক্ষার্থী, কিছু শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ভাসমান মানুষ- এরকম কয়েকটি ক্লাস্টার আছে যারা ভ্যাকসিন নেয়নি। তাদের এখন ভ্যাকসিনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি আমরা।"
তিনি বলেন, "সন্ধ্যায় ভ্যাকসিন সেন্টার চালুর পরিকল্পনা আছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আরো অনেক প্রস্তুতি বাকি আছে। তাই এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভাসমান মানুষ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।"
"ভ্যাকসিন নেওয়া কিন্তু এখন অনেক সহজ করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন না করলেও সেন্টারে গেলে ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। ভ্যাকসিন সেন্টার থেকে এখন কাউকে ফেরানো হচ্ছে না। ভ্যাকসিন পেতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা এখন নেই, সে বিষয়ে সব সেন্টারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে", যোগ করেন ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন সরকার টিকা দেওয়ার লোক খুঁজে পাচ্ছে না।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "করোনার ১০ কোটি টিকা হাতে আছে । সবাইকে টিকা দেওয়ার পরও টিকা বেঁচে যাবে। যারা টিকা নেননি তারা দ্রুত টিকা নেন।"
এ বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুস্টার ডোজসহ করোনার টিকা দেওয়া শেষ করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এ জন্য পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থাও আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভ্যাকসিনের জন্য এখন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
দেশে ভ্যাকসিন এসেছে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ
উপহার ও কেনাসহ দেশে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। এখন পর্যন্ত দেশের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ কোটি ৫১ লাখ মানুষ। বুস্টার ডোজ পেয়েছে ২০ লাখ মানুষ। এখনো ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন হাতে আছে।
বর্তমানে দেশে শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য ফাইজার, বুস্টার ডোজের জন্য মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং প্রথম ডোজ হিসাবে সিনোভ্যাক এবং সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব ভ্যাকসিনের মধ্যে মডার্নার ছয় মাস, ফাইজারের নয় মাস ও সিনোফার্মের মেয়াদ দেড় বছর। মেয়াদের আগে ভ্যাকসিন প্রদান শেষ করাটাও চ্যালেঞ্জ।
ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, "দেড়-দুই মাস মেয়াদ বাকি আছে এমন ভ্যাকসিনও আমরা পাই। আমরা সেন্টারগুলো নিয়মিত মনিটর করি। যেসব সেন্টারে ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি চলে আসে সেসব সেন্টারের ভ্যাকসিন অন্য সেন্টারে দিয়ে শেষ করে ফেলি।"
ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লক্ষীপুর
সুনামগঞ্জের ৪৬% এবং নেত্রকোনা ও লক্ষীপুরের ৫০% মানুষ এখন পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।
হাওর এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ সমস্যার কারণে এবং ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী না হওয়ায় ভ্যাকসিন নেয়ার হার কম বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসেন।
তিনি বলেন, "এছাড়া আমাদের এখানে প্রবাসী বেশি থাকায় তারা ও যারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তারা ঢাকা বা সিলেটে গিয়ে ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিন নিয়েছে। স্থানীয় হলেও তারা ভ্যাকসিন নিয়েছে ঢাকায় তাই তাদের তথ্য আমাদের এখানে যোগ হয়নি।"
ডা. আহমেদ হোসেন বলেন, "ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে বিরাট কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্যাম্প করে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। তবে সমস্যা হলো ভ্যাকসিন দেয়ার মত মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
যেসব জেলা উপজেলা ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে সেগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনিটর করছে ও ভ্যাকসিনেশনের হার বাড়াতে কাজ করছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, "ভ্যাকসিনেশনে আমরা ভালো করেছি। ১০ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়াটা কিন্ত কম অর্জন নয়। এজন্য মানুষকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। এবারের ওয়েভে কেস যত বেড়েছে হসপিটালাইজেশন বা মৃত্যু তেমন হয়নি। এই স্বস্তিটা এসেছে ভ্যাকসিনেশনের কারণে।"