টিকা কিনতে উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে আরও অর্থায়ন আসবে এ বছর
- ছাড় হচ্ছে ইআইবির ২৮৩ মিলিয়ন ডলার
- এআইআইবি দেবে ৫০০ মিলিয়ন
- গত অর্থবছরের প্রতিশ্রুতির ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করবে বিশ্বব্যাংক
- এডিবি ইতোমধ্যে ছাড় করেছে ৯৯০ মিলিয়ন ডলার, অপেক্ষায় ৯৪০মিলিয়নের চুক্তি
- টিকা মজুদ আছে ১০ কোটি
চলতি অর্থবছরে টিকা কিনতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বড় অংকের প্রতিশ্রুতি আদায় এবং অর্থছাড় হবে বলে আশা করছে সরকার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, কোভিডের টিকা উৎপাদন ও ক্রয়ে চলতি তিন উন্নয়ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ১.৭ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ঋণ চুক্তিও হয়ে গেছে। বাকি দুটি সংস্থার ঋণ চুক্তির পর পরই অর্থ ছাড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া গত অর্থবছরে টিকা কিনতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার অর্থছাড়ও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
গত মাসে ইউরোপিয়ান বিনিয়োগ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারে ২৮৩ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। চলতি মাসেই এ অর্থ ছাড় হবে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব উত্তম কুমার কর্মকার।
আগামী মার্চে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৫০০ মিলিয়ন ঋণ চুক্তি হবে । চুক্তি হওয়ার পর পর অর্থছাড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৯৪০ মিলিয়নের ডলারের ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে ।
এদিকে টিকা কিনতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতির ৫০০ মিলিয়ন ডলারও চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেস্পন্স প্রজেক্টের মাধ্যমে এ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরে বিশ্ব্যাংকের সঙ্গে এ ঋণ চুক্তি হয়েছিল। প্রকল্প কিছু জটিলতা থাকায় এত দিন অর্থছাড়ও আটকে ছিল। তবে জটিলতা দূর হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় করবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ডা. গোলাম নবী।
চলতি অর্থবছরে টিকা কিনতে ইতোমধ্যে এডিবি দুই ধাপে ৯৯০ মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় করেছে, গত অর্থবছরের এডিবি সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো চলতি অর্থবছর থেকে টিকার অর্থছাড় করতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছর টিকার কিনার লক্ষ্যে যে চুক্তিগুলো হবে, তার অর্থছাড়ও চলতি অর্থবছরে মধ্যে হবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা টিবিএস-কে বলেন, ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে ইআরডির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে, সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। টিকা যোগানে সরকারের সব সংস্থাই সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
ক্রয় ও উপহারসহ এপর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ২৭.৬৭ কোটি ডোজ টিকা এসেছে। টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৯.৯৮ কোটি মানুষ, দুটি ডোজ পেয়েছে ৬.৬৬ কোটি জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছে ২২ লাখ মানুষ, বুস্টার ডোজ দেওয়ার জন্য মজুদ আছে আরও ১০কোটি ডোজ।
সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের টিকাদানে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাদের হাতে এখন দশ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিন কেনায় টাকা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা নিজেও ভ্যাকসিন উৎপাদনে কাজ করছি।"
শুধু টিকা কিনতে নয়, উৎপাদনে উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও উইং চিফ ড. পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, এডিবির এই ঋণের ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনে। বাকি ৪৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বুস্টার ডোজ টিকা কিনতে।
এদিকে, প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনালের ফর্মুলা ব্যবহার করে দেশেই করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
গোপালগঞ্জে রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এহসানুল কবির জগলুল টিবিএস-কে বলেন, "ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনালের সাথে আমাদের একটি গোপনীয় চুক্তি সই হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে এমওইউ সাইন করতে ডকুমেন্টস আইন মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে এ মাসেই এমওইউ সই হবে। তবে ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।"