দেশের সর্বত্র ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ বিটিসিএলের
সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন সর্বাধুনিক টেলিযোগাযোগ ও আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এর মাধ্যমে বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক ফাইভ-জি উপযোগী করা হবে।
এ লক্ষ্যে "৫-জি'র উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন" শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫৯ কোটি টাকা। আগামী চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভৌগলিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো কিছু জেলায় বিটিসিএলের নির্ভরযোগ্য উচ্চ গতির অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক নেই। সেসব জেলায় রেডিও লিঙ্কের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও কয়েকটি জেলায় এখনো কোনো ধরনের রিডান্ডেন্ট অপটিক্যাল সংযোগ নেই যে কারণে সেসব জেলায় নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো স্থানে বিটিসিএল নেটওয়ার্কের রিডান্ডেন্সি নির্ভর করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লাইনের উপর। এ অবস্থায় শক্তিশালী অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন রিং-টাইপ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ কারণেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ১৪৬টি আন্ডারগ্রাউন্ড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লিংক স্থাপন করা হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ৩১৪৪ কিলোমিটার। সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লিংক স্থাপন করা হবে ৮টি, যার দৈর্ঘ্য হবে ৩৯ কিলোমিটার।
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় দেশের মোট তথ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ বহন করে থাকে বিটিসিএল। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর বিটিসিএলের বর্তমান অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। সে কারণে এই নেটওয়ার্কের যেকোনো দুর্বলতায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তথ্য প্রবাহে প্রতিযোগিতার কারণে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ মাধ্যম আইসিটিভিত্তিক আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধিতে একটি প্রধান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। শ্রম-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে অনেক উৎসাহমূলক প্যাকেজ যেমন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, ডিজাইন, উদ্যোক্তা একাডেমি ইনোভেশন, ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রিনিউরশিপ একাডেমি (আইডিইএ), হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, বিজনেস ইনকিউবেটর এবং ফ্রিল্যান্সারদের আইডি দেওয়ার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ মাধ্যমের কানেকটিভিটি, নির্ভরযোগ্যতা, ব্যান্ডউইডথ এবং ল্যাটেন্সি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোঃ মামুন-আল-রশিদ বলেন, "বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে বিপ্লব ও উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে, সে উন্নয়নের ধারায় সামিল হতে ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকল্প নেই। আমাদের ৫-জি উপযোগী নেটওয়ার্ক স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।"