বিমানবন্দরে উন্নত যাত্রীসেবায় ১৬ লাউঞ্জ: বেড়েছে মান ও অভ্যন্তরীণ যাত্রী চাহিদা
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী দেখা যাওয়ার পরের বছর দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীর চাহিদা বেশ কিছুটা কম হলেও যাত্রী চাহিদা ও চাপ আবার বাড়ছে। দেশের বিদ্যমান যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিমানবন্দরগুলোতে আধুনিক লাউঞ্জ, উন্নত যাত্রী সেবা, বর্তমান সরকারের সম্পন্ন হওয়া ও চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ সহ বিমানবন্দরসমূহের সেবা ও পরিবেশ যাত্রীদের আগের তুলনায় অনেক বেশি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছর প্রতিটি ফ্লাইটে ব্যপক যাত্রী চলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সেটি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী ছিলো ৪৫ লাখ, ২০২০ সালে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২০ লাখ। আশার দিক হলো গত বছর আবারও যাত্রী চলাচল বেড়ে হয় ৫০ লাখ। বর্তমানে প্রতিদিন ১৮০ টি ফ্লাইট চলাচল করছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রী বৃদ্ধির হার এবং অভ্যন্তরীণ নতুন এয়ারলাইন্স চালু হলে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের জায়গা সংকুলান হবেনা বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা আশংকা করে আসছিলেন। ভবিষ্যতের যাত্রীচাপ সামাল দেওয়ার জন্য সিএএবি কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবন বৃদ্ধি, যাত্রীধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও যাত্রীসেবামান বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সরকারি এসব উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রথম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আধুনিক সেবাসম্পন্ন লাউঞ্জ নির্মাণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়নে সারা দেশে মোট ১৬ টি লাউঞ্জ চলমান ও ২টি লাউঞ্জ নির্মাণাধীন আছে। এসকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নকশীকাঁথা, ধানসিড়ি কমিউনিকেশন, ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট, আরিয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, গোল্ডহিল এলায়েন্স এবং গ্লোবাল এ্যারোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমতিক্রমে যাত্রীসেবায় বিমানবন্দর টার্মিনালগুলোতে এসব লাউঞ্জ নির্মাণ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। লাউঞ্জগুলোর মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে ৫টি, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ৩টি, চট্টগ্রামের শাহ আমানতে ৩টি, কক্সবাজারে ২টি, সিলেটে ২টি ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ১টি লাউঞ্জ। এতে উন্নত যাত্রীসেবার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ছে বেবিচকের। লাউঞ্জগুলোতে ওঠা-নামার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক লিফট ও যাত্রীদের জন্য উন্নতমানের বসার ব্যবস্থা। জরুরি কাজে স্বল্পসময় ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌছাতে অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করেন যাত্রীরা।
ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রায়ই যাতায়াত করতে হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারি রবিউল ইসলামকে। তার সঙ্গে বিমানবন্দগুলো সেবার বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কোনো কারণে ফ্লাইট বিলম্ব হলে বিমানবন্দরে ভোগান্তির শিকার হন বিভিন্ন যাত্রীরা। বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বসার তেমন মানসম্মত ব্যবস্থা না থাকার কারণে এ দুর্ভোগ হতো যাত্রীদের। এখন আর সেই ভোগান্তি নেই বলেও তিনি জানান।
বর্তমান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলোতে বিভিন্ন লাউঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বিমানবন্দরের অপেক্ষমান যাত্রীরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। শুধু তাই নয় আগের তুলনায় বিমানবন্দরের পরিবেশও অনেকটা উন্নত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ মাসেই ঢাকা অভ্যন্তরীন বিমানবন্দরে ২টি এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ১টি লাউঞ্জ উদ্বোধন হয়েছে।
ঢাকা অভ্যন্তরীন বিমানবন্দরে বহুবছর ধরে পড়ে থাকা ছাদে বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠান খোলা স্থান ইজারানীতির আলোকে বেবিচক হতে পরিত্যক্ত ছাদটি ইজারা নেয়। ৫০-৫০ অংশীদারিত্বের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের দুটি যাত্রী সেবা লাউঞ্জ স্থাপন করে যার আয়তন আনুমানিক প্রায় ৩৩৬০ বর্গফুট অবশিষ্ট ৪১০০ বর্গফুটে নির্মাণ করা হয় যাত্রীদের বসার স্থান। প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ স্থাপনাটি নির্মাণ করে এবং স্থাপন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা, লিফট, বিনামূল্যে বসানো হয় আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী চেয়ার, নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ওয়াশরুম এবং আন্তর্জাতিক মানের খাবার ব্যবস্থা। বর্তমানে একটি দৃষ্টিনন্দন নামাজের স্থান নির্মান কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুরো প্রকল্পে বেবিচকের আর্থিক কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বরং যাত্রীসেবা এবং রাজস্ব আয় দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নকশীকাঁথার তত্ত্বাবধায়নে একটি লাউঞ্জ উদ্বোধন হয়েছে। লাউঞ্জটি উদ্বোধন করেন মাননীয় বানিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুন্সী সহ মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
ঢাকা অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ধানসিড়ি কমিউনিকেশনের তত্ত্বাবধায়নে আরও একটি লাউঞ্জ খুব শীঘ্রই উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।