‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক নিরাপদে রোমানিয়ায় পৌঁছেছেন
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ 'বাংলার সমৃদ্ধি'র ২৮ নাবিক ইউক্রেন থেকে নিরাপদে রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ সময় রোববার (৬ মার্চ) বিকেল সোয়া চারটায় তারা রোমানিয়ায় পৌঁছান। সেখানে স্থানীয় একটি হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রোববার বিকেল ৫টার দিকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী।
তিনি জানান, "মলদোভা থেকে দূতাবাসের ভাড়া করা একটি গাড়িতে নাবিকদের বুখারেস্টে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ যাত্রা করে আসলেও তারা সবাই সুস্থ আছেন।"
"বাংলাদেশে ফেরার আগপর্যন্ত বুখারেস্টের একটি হোটেলে নাবিক ও ক্রুদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখান থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।"
যেভাবে বুখারেস্ট পৌঁছালেন নাবিকরা :
রোমানিয়ায় পৌছানোর বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে এমভি বাংলার সমৃদ্ধির নাবিক সালমান সামি'র। তিনি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে বিস্তারিত জানান।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৯ নাবিক নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়েছিল তাদের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি। এর আটদিনের মাথায় গত বুধবার সন্ধ্যায় এক রকেট হামলায় নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান। পরদিন বৃহস্পতিবার জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ইউক্রেনপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় ২৮ নাবিককে একটি টাগবোটে করে বন্দরের বাইরে একটি বাংকারে নেওয়া হয়।
সালমান বলেন, "একটি অজ্ঞাত সোর্স আমাদের সাহায্য করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় বাংলাদেশিও আছেন।"
তিনি জানান, সেই বাংকারে টানা বাংকারে ৩৯ ঘণ্টা কাটানোর পর শনিবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সোয়া ৮টার দিকে নাবিকেরা বাসে করে প্রতিবেশী দেশ মলদোভা সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেন। ২০০ কিলোমিটার মলদোভার যাত্রাপথে ইউক্রেনের সেনারা একটি সেতু ভেঙে দেওয়ায় তাঁরা যানজটে পড়েন। ফলে তাদের মলদোভা যাত্রা সাময়িক থমকে যায়। পরে বিকল্প পথে তারা মালদোভা হয়ে রোববার রোমানিয়ায় পৌঁছান।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসাইন টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ সময় ৯টার পর ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে মালদোভা সীমান্ত অতিক্রম করেন নাবিকরা। এর পরপরই তাদের রোমানিয়া দূতাবাসের অধীনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দূতাবাসের ভাড়া করা অপর একটি বাসে তারা রোমানিয়ায় রাজধানী বুখারেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।"
এভাবে দুদিনের দীর্ঘ যাত্রা শেষে বাংলাদেশ সময় রোববার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বুখারেস্টের নির্ধারিত হোটেলটিতে পৌঁছায় নাবিকদের পরিবহনকারী বাসটি। এ সময় তাদের অভ্যর্থনা জানান রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী।
রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী জানান, "যেহেতু সেখান থেকে একসঙ্গে সবার ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা গ্রুপে নাবিকদের দেশে পাঠানো হবে। আগামী মঙ্গলবার নাগাদ এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে।"
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত জানান, নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের মরদেহ অলভিয়া বন্দরে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সময় সুযোগ বুঝে মরদেহটি দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে।