সাভারে মহাসড়কের যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি ও যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে গেন্ডা বাজার পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করায় এবং রাস্তার মধ্যেই মাটি, ইট, বালু স্তুপ করে রাখায় এ এলাকার মানুষের ভোগান্তির সাথে সাথে রাস্তায় চলাচল করা গাড়িও আটকে থাকছে যানজটে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।
সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ রাস্তাটিতে যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচল রোধে এবং সরু রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজের জন্যই এ সমস্যা হচ্ছে। গাবতলী থেকে নবীনগর পর্যন্ত ৯টি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে চার লেন রাস্তাকে বিভক্ত ও প্রশস্ত করে ৮ লেন করার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ তৈরীর কাজও চলমান থাকায় যান চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সাভার পৌরসভা জানিয়েছে, এ সড়কের উন্নয়ন কাজ এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে হচ্ছে, পৌরসভার কোনো কাজ নয়। এরপরেও যাতে গাড়ি চলাচলে এবং মানুষের ভোগান্তি যতোটা সম্ভব কমানো যায়, সে বিষয়ে রাস্তার কাজে নিয়োজিত সংস্থাকে বলেছে পৌরসভা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড, গেন্ডা বাজার এলাকার রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাটি বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চার লেনের রাস্তা ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দুই লেনের রাস্তার মধ্যে ডিভাইডার স্থাপন করে চার লেন করা হয়েছে রাস্তার দুই পাশে। তবে বেশ কিছু স্থানে ডিভাইডার বসানোর জন্য রাস্তা খুঁড়ে রাখা হলেও সেখানে বসানো হয়নি ডিভাইডার। এ কারণে রাস্তায় চলাচল করা যানবাহন সম্মুখীন হচ্ছে প্র্রতিবন্ধকতার।
এছাড়া গেন্ডা বাজারের রাস্তার পশ্চিম পাশের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তার উপরেই রাখা হয়েছে মাটি, বালিসহ রাস্তা মেরামতের নানা উপকরণ। পাশের ড্রেনের কাজের জন্য খুঁড়ে রাখা মাটিও পড়ে আছে কয়েক মাস ধরে। এতে মানুষের চলাচলসহ গাড়িগুলোকে এক লেনে চলাচল করতে হচ্ছে।
কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় এগুলোর লোহার পাত দিয়ে সড়কে বসেই বানানো হচ্ছে কাঠামো। এভাবে রাস্তা দখল করে ফুটওভার ব্রিজের কাজ করায় এবং বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার উপরে রাখায় পথচারী, ছোট যানবাহন চলাচলেও সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।
গেন্ডা বাজারের রাস্তার পাশের দোকানী শাখাওয়াত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ড্রেনের কাজের শুরুতে মাটি তুলে রাস্তার মধ্যেই রেখেছে প্রায় দেড় মাস হবে কিন্তু এখনও সরানোর নাম নেই। মাটি রাস্তায় ছড়িয়ে যাওয়ায় এবং এর পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় এ এলাকা ধুলায় নিমজ্জিত থাকে। দোকানে মানুষ আসে না, বেচাবিক্রি নেই। অধিকাংশ সময়ই দোকান বন্ধ রাখি।"
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল মনসুর টিবিএসকে বলেন, "রাস্তার কাজ শুরু করেছে দুই বছরের বেশি হবে কিন্তু এখনও শেষ করেনি। রাস্তার মধ্যে গর্ত করে রাখায় প্রায়ই দেখা যায় যানজট লেগে আছে। রাতে এক্সিডেন্টও ঘটে ২/৩ টা।"
ট্রাক ড্রাইভার জহিরুল ইসলাম বলেন, "ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানেই রাস্তার কাজ চলছে কিন্তু সাভার বাজারের এই অংশে যেমন মানুষের চাপ বেশি তেমনি রাস্তার কাজে বিশৃঙ্খলাও বেশি। বেশ কয়েকটি স্থানে খুঁড়ে পিচ তুলে আবার রাস্তাতেই রাখা হয়েছে। আবার রাস্তার পাশে ১০/১২ ফুট উচু করে মাটির স্তুপ রাখা; এতে গাড়ি এক লেনে এবং আস্তে চলার কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। অনেক সময় ধুলার কারণে গর্তও চোখে পড়ে না। যার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। আমি নিজেও ট্রাক নিয়ে গত পরশু এক গর্তে আটকে গিয়েছিলাম।"
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার লেনের রাস্তা ৮ লেনে উন্নীতকরণ, ইউলুপ তৈরী, ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনসহ সড়কটির উন্নয়ন কাজ হাতে নেয় সংস্থাটি। আগামী মে মাসে শেষ হবে এ উন্নয়ন কাজের মেয়াদকাল। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে আট লেনের কাজ, ইউলুপ, ফুটওভার ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তার সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে সবগুলো চালু হবে বলে জানায় সওজ।
সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (কল্যাণপুর জোন) মোঃ মারুফ হাসান বলেন, "সাভার বাসস্ট্যান্ডের দিকে আট লেনের কাজ চলমান থাকায় রাস্তার কিছু অংশে খোঁড়া হয়েছে। আগের রাস্তায় বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরায় পিচ তুলে নতুন করে মেরামত করতে হচ্ছে বলে একটু ভোগান্তি হচ্ছে। তবে এ এলাকায় মানুষের চাপ বেশি থাকায় এবং যানবাহন বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করায় যানজট ও ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।"
রাস্তার মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী ও মাটি স্তুপ করে রেখে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের রাস্তার কাজ করতে পুরো রাস্তা বন্ধ করা দরকার কিন্তু সেটি তো করা সম্ভব না তাই এক অংশের কাজ শেষ করে গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিয়ে এক পাশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বেশ কিছু স্থানেরই মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।"
রাস্তাটির কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং আগামী ৩ মাসের মধ্যে কাজ অধিকাংশ শেষ হলে এলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইমাম এ বিষয়ে টিবিএসকে বলেন, "আমরা মানুষের ভোগান্তির কথা সওজকে বেশ কয়েকবার বলেছি। তারা কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুনেছে, কিছু ক্ষেত্রে শুনেনি। এমনকি আমরা কয়েকটি স্থানের কাজও বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু তারা তো সরকারি সংস্থা; তাদের বলা যায় কিন্তু জোর তো করা যায় না। আর এ সময়ে ধুলা সব জায়গায়ই, আমাদের পৌরসভা থেকে করার তেমন কিছু নেই।"