২ লাখ বাংলাদেশি নিয়োগের জন্য আবেদন করেছে মালয়েশিয়ানরা
প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য তাদের সরকারের কাছে আবেদন করেছে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা। ১০ মার্চ পর্যন্ত চলে এই আবেদন।
তবে, মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) এর মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া ২৫ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সামনে আবেদনের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির নিয়োগকর্তাদের জমা দেওয়া চাহিদাপত্র মূল্যায়ন করছে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান বৃহস্পতিবার দেশটির গণমাধ্যমকে বলেন, মূল্যায়নের পর বাংলাদেশ থেকে বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, সেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালী সেবাসহ সব খাতে কর্মী নিয়োগ করবে তারা।
মালয়েশিয়ায় শ্রম নিয়োগে সিন্ডিকেশন নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষ করে ঢাকা এবং কুয়ালালামপুর এই বিষয়ে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করার পর এই বিতর্ক চলে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এই বছরের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে ২৫ বাংলাদেশি এজেন্ট এবং ২৫০ সাব-এজেন্টের একটি সিন্ডিকেট বিতর্কের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
চিঠির জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ সব বৈধ বাংলাদেশি সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশি এবং মালয়েশিয়ান, দুই দেশের নিয়োগকারীই সিন্ডিকেশন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে, কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশি সাংবাদিক আহমেদুল কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগে নিয়োগকর্তাদের মালয়েশিয়ার এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের জন্য এফডব্লিউসিএমএস-এ আবেদন করতে হতো। কিন্তু এখন নিয়োগকর্তারা সরাসরি এফডব্লিউসিএমএস-এ আবেদন করতে বাধ্য।"
একটি বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি বসবাস করে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ডা. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন টিবিএসকে বলেন, "স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, শ্রমিক পাঠানোর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত সব বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি তালিকা পাঠিয়েছি। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবে যে কোন নিয়োগকারীরা এতে যুক্ত হবেন।"
বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০টি নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে।
তবে, মালয়েশিয়া কীভাবে নিয়োগকারীদের কাছ থেকে লোক নেবে, কীভাবে তারা কর্মীদের মেডিকেল পরীক্ষা করবে, তারা বাংলাদেশেই ভিসা দেবে নাকি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পরে দেবে- সে সম্পর্কে বিস্তারিত একটি নীতিমালা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক সভাপতি আবুল বাশার।
এর আগে, ১০টি এজেন্সির একটি সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ স্থগিত করে।
তিন বছরেরও বেশি সময় বিরতির পর, গত বছর মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য তাদের শ্রমবাজার পুনরায় চালু করে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব কমতে থাকায় কর্মীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সম্ভাব্য কিছু দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করেছে মালয়েশিয়া।
এদিকে, স্থানীয় জনশক্তি নিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্টদের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল শ্রমিকদের শোষণের জন্য সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।
বায়রার প্রাক্তন মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা কখনই নিয়োগকারীদের সিন্ডিকেশন মেনে নিইনি। আমাদের মন্ত্রণালয়ও নির্বাচিত কয়েকজনকে নয়, সমস্ত নিবন্ধিত নিয়োগকারীদের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে।"
"বর্তমানে, আমরা মালয়েশিয়া বাদ দিয়ে প্রতি মাসে এক লাখেরও বেশি কর্মী পাঠাচ্ছি। তাই, মালয়েশিয়ার অংশ যদি ক্রমাগত বাংলাদেশকে নিয়োগকারীদের সিন্ডিকেশন অনুসরণ করার জন্য চাপ দেয়, তাহলে আমরা সেখানে কর্মী পাঠাব না কারণ আমাদের কাছে অন্যান্য গন্তব্য আছে," যোগ করেন তিনি।
৪ ডিসেম্বর দেওয়া একটি বিবৃতিতে ফেডারেশন অফ মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম) বলে, দেশের বর্তমান তীব্র জনবল ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে শিল্প খাতে, বিশেষ করে রপ্তানি ভিত্তিক সংস্থাগুলোর জন্য আগামী বছরের মধ্যে ছয় লক্ষেরও বেশি বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন।
বর্তমানে, উৎপাদন খাত এবং খাদ্য ও পানীয়, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য, ধাতু ও রাবার পণ্যের মতো উপ-খাতে শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত পূর্ববর্তী সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া অভিবাসী নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।