ভাষা সংরক্ষণে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগ
জাতীয় পর্যায়ে নৃগোষ্ঠী ভাষাসহ দেশের সবগুলো ভাষা সংরক্ষণে তৈরি হচ্ছে ভাষা বিষয়ক ডিজিটাল রিসোর্স রিপোজিটোরি। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে তৈরি হতে যাওয়া এই রিপোজিটোরিতে বাংলাদেশের ৪০টি ভাষার এনোটেটেড নমুনা সংরক্ষিত থাকবে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের "গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ" প্রকল্প (ইবিএলআইসিটি) কর্তৃক আয়োজিত 'বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন' শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
বিসিসি সভাকক্ষে আয়োজিত এই সভায় উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, "সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাংলাসহ ৪১টি জীবিত ভাষা আছে। এর মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্নপ্রায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই এই ভাষাগুলো হারিয়ে যাবে। এমতাবস্থায়, ভাষাগুলোর বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টেশন ও সংরক্ষণের জন্য এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ভাষা সম্পর্কে নতুন ও প্রামাণ্য জ্ঞান তৈরি করে দেবে। সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষী মানুষেরা তাদের ভাষা সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ভাষার নমুনা হাজির করে ভাষা পুনরুজ্জীবনের উপায় বের করবেন। ভাষা গবেষকরা পাবেন তাদের গবেষণার রিসোর্স ও রিপোর্ট। একইসঙ্গে বিপন্ন ভাষাগুলো প্রযুক্তিতে ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠার রূপরেখা পাবে। আইসিটি বিভাগ ভাষা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের কারিগরী সহায়তা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, জাতিসংঘ ঘোষিত 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ' এর আহবায়ক এ কে শেরাম।
সভার কারিগরী অধিবেশনে কম্পোনেন্টটি বাস্তবায়নের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। ইবিএলআইসিটি প্রকল্পের এই কম্পোনেন্টটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ৪০টি ভাষার অন্তত ১২০০০ মিনিট স্পিচের আইপিএ উচ্চারণসহ অনুবাদ, প্রতিটি ভাষার জন্য সংক্ষিপ্ত ত্রৈভাষিক শব্দকোষ, নিজস্ব লিপি থাকা ভাষাগুলোর জন্য ইউনিভার্সাল কিবোর্ড, ইউনিকোড ফন্ট, উচ্চারণ সহ ফনোলজিক্যাল চার্ট, ওরাল লিটারেচারের একটি সুবিন্যস্ত সংগ্রহশালা তৈরি হবে বলে জানানো হয়।
এর ফলে বিপন্ন ভাষাগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভিংয়ের পাশাপাশি নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষী মানুষেরা কিবোর্ডে নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল জগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন। সভায় উপস্থিত নৃগোষ্ঠী ভাষা-বিশেষজ্ঞ, লেখক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর পেশাজীবী ও ছাত্রছাত্রীসহ সুধী সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।