গতি পাচ্ছে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন, ২৭ মার্চ মহা-সমাবেশ
'চট্টগ্রামের ফুসফুস' খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধীতা করে চলমান আন্দোলন নতুন গতি পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা এই ইস্যূতে নিরব ভূমিকা পালন করলেও এবার আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
আগামী ২৭ মার্চ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে না। কিন্তু সিআরবির ঐ জায়গায় হাসপাতাল হোক তা চাই না। রেলওয়ের আরও অনেক জায়গা আছে। চট্টগ্রামের এক-চতুর্থাংশ জায়গার মালিক রেলওয়ে। হাজী ক্যাম্পে রেলের বিশাল জায়গা পড়ে আছে। সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারে।"
"পাহাড় কিংবা দৃষ্টিদন্দন সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না। আমরা সেখানে সুন্দর পার্ক চাই। মানুষ যাতে নিঃশ্বাস নিতে পারে। চট্টগ্রামের সুন্দর জায়গাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষা করতে আমাদেরকেই কথা বলতে হবে," বলেন তিনি।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি) চুক্তির আওতায় ১৮৭২ সালে নির্মিত বন্দরনগরীর প্রাচীনতম ভবন সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এর পাশে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, রেলের ছয় একর জায়গায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি নির্মাণ করবে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে রেলওয়েকে। প্রকল্পটি বাতিলের দাবিতে গত বছরের ১৩ জুলাই শুরু হওয়া আন্দোলন কর্মসূচি টানা আট মাসে গড়িয়েছে।
আন্দোলন চলাকালেই ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের রেলপথ মন্ত্রণালয়ে 'বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স' নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আবেদন করে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর এই নামে হাসপাতাল করার ব্যাপারে অনুমোদন দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। যদিও বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন নেওয়াকে আন্দোলনকারীরা অপকৌশল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্যদিকে দীর্ঘ আন্দোলনেও এ নিয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় হতাশ আন্দোলনকারীরা। এ সুযোগে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প কাজের পরিধি বাড়িয়ে দেয় রেলওয়ে। ইতোমধ্যে হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সিআরবির গোয়ালপাড়া এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রমও শুরু করেছে রেলওয়ে। এই অবস্থায় চট্টগ্রামবাসীর পাশে ত্রাতা হয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, "রেলমন্ত্রী চট্টগ্রাম সফরকালে বলেছেন চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা না চাইলে প্রকল্পটি হবে না। আমরা বলেছিলাম এই আন্দোলনের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, আমি নিজে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, আমাদের সাথে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আছেন। ড. হাছান মাহমুদও আমাদের সাথে থাকার কথা বলেছেন। এখন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ভাই আসলে রেলমন্ত্রীর চাহিদা পূর্ণ হবে।"
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত এলাকা পরদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে আইন এবং বৈধভাবে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চেষ্টা করা হয়। সিআরবিতে প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্পটি আইনে কোনোভাবে বৈধ নয়। যে কারণে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশের সংরক্ষিত এলাকা ধ্বংস করে ইতিহাস সংস্কৃতি বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।"
"মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন (২০০০ সনের ৩৬ নং আইন ), ২০০৯ সালের সিডিএ মাস্টার প্ল্যানে সিআরবিকে হেরিটেজ জোন ঘোষণা করে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই এলাকা ব্যবহার করা যাবে না এবং বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের সুযোগ নেই," বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।