স্বপ্নের খুব কাছ থেকে ফিরে গেল প্রীতি
রাজধানীর পশ্চিম শান্তিবাগের ২১৮ নম্বর বাসার তুতীয় তলা। নক করার বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খুললেন জামাল উদ্দিন। প্রতিবেদকের পরিচয় শুনেই বলতে শুরু করলেন, "আমাদের মেয়ে তো আর বেঁচে নেই। বিচারও চাই না, শুধু স্মৃতিটুকু নিয়েই বাঁচতে হবে।"
ভাঙা গলায় কথাগুলো বলতে বলতে প্রীতির রুমে নিয়ে গেলেন। চোখের পানি মুছে একে একে বলতে লাগলেন প্রীতি ও তার ছোট ভাই সোহাইব জামালকে ঘিরে নানা স্বপ্নের কথা।
বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর শাহজাহানপুরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ করে গুলি চালায়। এসময় পাশের রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
এ ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তবে প্রীতির পরিবার এখনো মামলা দায়ের করেনি। জানতে চাইলে প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান কাউকে ভয় পাই না। কোনো ভয় থেকে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেই নি।"
"আমরা সাধারণ মানুষ বলেই মামলার জটিলতায় যেতে চাইনি। এছাড়া একই ঘটনায় তো মামলা হয়েছে। দোষীদের বিচার হলে তো ওই মামলায়ও হবে।"
জামাল উদ্দিন বলেন, "আমি ঢাকার এসেছি ২০১১ সালে। ছোট চাকরি করি, টানাপোড়নের সংসার আমাদের। তবুও কখনো আশাহত হইনি। স্বপ্ন দেখেছি, আমাদের এইসব কষ্টের ফল সুন্দর হবে। আমাদের মেয়ে ধীরে ধীরে আমাদের কষ্ট আঁচ করতে শুরু করে।"
প্রীতি প্রায়ই বলতো, 'এই আর কটা দিন পর আর তোমাদের কষ্ট করতে হবে না, আমি আর আমার ভাই চাকরি করবো। তোমাদের এত ভাবতে হবে না তখন।'
জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে টাকা আয়ের পরিকল্পনা থেকে কয়েক মাস ধরে প্রীতি কম্পিউটার ট্রেনিং করছিলো। সামনের মাসে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করার কথা ছিল তার।
"একটি ল্যাপটপ কিনে দিবো বলেছিলাম। যাতে বাসা থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে," বলেন তিনি।
"ওর এই কথাগুলোতে কেমন শান্তি পেতাম। স্বপ্নও দেখেছি, হয়তো ওদের মাধ্যমেই আমাদের সংসারের অভাব দূর হবে। এসব স্বপ্নে জড়িয়ে অপেক্ষা করেছি এতোদিন। কিন্ত স্বপ্নের খুব কাছ থেকে ফিরে গলো আমাদের প্রাণচঞ্চল প্রীতি…কষ্টের সংসারের হাসিটাও চলে গেলো বুকটাও খালি হলো," বলেন জামাল উদ্দিন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য শিগগিরই উদঘাটন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, "অবশ্যই এর পেছনে কারা রয়েছে, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সব কিছুই খোলসা করে আপনাদের জানিয়ে দেব। তদন্ত চলছে। যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "পলিটিক্যাল কিলিংয়ের বিষয়ে আমরা এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।"