গণশুনানিতে বিমান বাংলাদেশ নিয়েই মানুষের যত অভিযোগ
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে গণশুনানিটে অংশ নেওয়া যাত্রীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সেবা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরের বহির্গমন কনকোর্স হলে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লার বাসিন্দা মো. রিয়াদ সরকার শুনানিতে প্রথম প্রশ্ন রাখেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরুর কথা ছিল তার। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর জানতে পারেন ফ্লাইট দেরিতে ছাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে বিমানবন্দের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়েও অসদাচরণের মুখোমুখি হন।
রিয়াদ বলেন, 'বিমানের কাউন্টারে গেলে তারা আমার সঙ্গে ভিক্ষুকের মতো আচরণ করেন। কোনো সহযোগিতাই করেননি। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে এত মানুষ দেখে মনে হয় এটা একটা ট্যুরিস্ট এলাকা। এখানে কি সিনেমা চলে? একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেবা আন্তর্জাতিক নয় কেন?'
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান অভিযোগটি শুনে গণশুনানিতে বিমানের প্রতিনিধি হিসেবে কে উপস্থিত আছেন জানতে চান। যদিও সেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, ছিলেন না কেবল বাংলাদেশ বিমানের কোনো প্রতিনিধি। এতে উষ্মা প্রকাশ করেন বেবিচক চেয়ারম্যান। তিনি পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিমানের প্রতিনিধিকে গণশুনানিতে উপস্থিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি অভিযোগকারী যাত্রী রিয়াদের কাছে দুঃখপ্রকাশও করেন এবং এজন্য বাংলাদেশ বিমানকে জবাবদিহির মুখোমুখি করারও আশ্বাস দেন।
মফিদুর রহমান বলেন, আমরা যাত্রীসেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। বিমানবন্দরে কারো সেবা ব্যাহত হওয়া কাম্য নয়।
'এজন্য হেল্প ডেস্ক আছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। অভিযোগ এলে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হয়। যারা সেবা দিতে ব্যর্থ হন, তাদের জরিমানা করা হয়।'
গাফিলতি ধরিয়ে দিতে তিনি যাত্রীদেরই সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
গণশুনানি চলাকালে প্রায় ১০ মিনিট পর সেখানে আসেন বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার আরিফুজ্জামান খান। তিনি রিয়াদ সরকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন এবং তার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে বিমানের টিকিটের বেশি দামের অভিযোগ করেন কুমিল্লার মো. তৌহিদুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, 'আবুধাবি থেকে আমি ৫০ হাজার টাকায় যাওয়া-আসার দুই পথেরই টিকিট কিনতে পেরেছি। কিন্তু বিমানে আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে টিকিট কিনতে কেবল যাওয়ার জন্য ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা গুনতে হয়। এটা কেন?'
এর জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, সরকারের সাথে আলোচনা করে টিকিটের দাম কমানোর চেষ্টা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী যাওয়ার যে চাহিদা, সে তুলনায় উড়োজাহাজের সংখ্যাও কম। অন্য দেশের বিমান সংস্থার চেয়ে একারণেই বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে বেশি ভাড়া দিতে হয়।
বিমান ইতিমধ্যে ভাড়া কমিয়েছে, আসনের ধারণক্ষমতা বাড়িয়েছে- বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গোলাম মোস্তফা নামে সৌদিগামী একজন যাত্রী এবং জর্জিয়ার নাগরিক কার্ল অগাস্টনও গণশুনানিতে বিমানের যাত্রীসেবা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে অংশ নেন শাহজালাল বিমানবন্দরের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান, নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।