নিউমার্কেটে দোকানপাট খুলেছে
কর্তৃপক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে খুলেছে ঢাকা নিউমার্কেট। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য মার্কেটের দোকানগুলোও খুলছে সকাল থেকে। কিন্তু ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে এখনও। সেইসঙ্গে, ফুটপাতে বসা হকারদেরও সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি এবং ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা পর দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে শিক্ষার্থীরা দোকান মালিকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে ক্ষতিপূরণ এবং কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি জানায়।
এর আগে, বুধবার (২০ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন জানিয়েছিলেন, বুধবার থেকে নিউমার্কেট এলাকার দোকানপাট আবারও খুলবে। তবে দোকানপাট খুলতে শুরু করলে ঢাকা কলেজ এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
শাহীন বলেন, "আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করবেন এবং আমাদের সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা আশাবাদী আজকের মধ্যেই দোকানপাট খুলবে।" সেইসঙ্গে তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি বিবেচনা করারও আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিউমার্কেট পুনরায় খুলে দেওয়া হবে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই মনে হচ্ছে।
নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, "আপনাদের এসব কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই।"
"যারা অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করেছে তারা ব্যবসায়ী ছিলনা, তারা তৃতীয় পক্ষের গুন্ডা ছিল। ফুটেজ পরীক্ষা করে যদি আমরা প্রমাণ পাই কোনো ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব", যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) মধ্যরাতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, সোমবার রাতে তাদের এক সহপাঠী নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের দ্বারা হামলার শিকার হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসের শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মার্কেটে হামলা চালায়।
এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। হামলায় বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৯ এপ্রিলের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে।
এর জবাবে, ব্যবসায়ীরা শীঘ্রই সংগঠিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিপরীতে দোকান মালিকরা জানান, ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটের একটি ফাস্টফুডের দোকানে খেতে আসেন। তারা বিল না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দোকানে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে।
সোমবার রাতের ঘটনার পর নিউমার্কেট এলাকার দোকানদার, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে দিনব্যাপী সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ হাসান (১৮) ও মোঃ মোরসালিন (২৪) নিহত হয়েছেন।
বাটা সিগনাল এলাকায় অবস্থিত একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে কাজ করতেন নাহিদ। মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত হওয়ার পর বুধবার ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
২৪ বছর বয়সী মোরসালিনও ওইদিনের সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া।
নূরজাহান মার্কেটের একটি অংশ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
এরপর পুলিশ এতে বাধা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিউমার্কেট দোকানিদেরও শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাথর ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও পরে আবার ফিরে আসে।
এদিকে, আগামী ৫ মে পর্যন্ত কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ারও নির্দেশ দেয় তারা।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের পক্ষে ৭ কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট বুধবার সকাল ১১টায় নীলক্ষেতে বিক্ষোভের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, সংঘর্ষে ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন দোকানিরা।