‘কী দোষ ছিল আমার ভাইয়ের, ওরা তাকে মেরেই ফেললো!’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ডা. মনিকা খন্দকারের নেতৃত্বে চলছিলো মোহাম্মদ মোরসালিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বড় ভাই নূর মোহাম্মদ। উপস্থিত সাংবাদিকরা মোরসালিনকে নিয়ে তার কাছে জানতে চাইছিলেন। কিন্ত তিনি একেবারে স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন, কোন জবাব দিতে পারছিলেন না। কখনো ফুঁপিয়ে কান্না করছিলেন। তার চোখের পানি জানান দিচ্ছিলো কষ্টের তীব্রতা।
দুপুর প্রায় ১টার দিকে মোরসালিনের ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার কথা জানান ফরেনসিক বিভাগের দায়িত্বরতরা। তখন তার মরদেহ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হচ্ছিল। এমন সময় ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নূর মোহাম্মদ কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। তিনি বলেন, "কী হবে ওর মাসুম ২ বাচ্চার। আমি কী জবাব দেব তাদের। বাচ্চা দুটি তাদের বাবাকে ছাড়া এখন কেমন করে বড় হবে? কে নেবে তাদের দায়িত্ব?"
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, "বড় ভাইয়ের কাঁধে ছোট ভাইয়ের লাশ। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। কী দোষ ছিল আমার ভাইয়ের, ওরা তাকে মেরেই ফেললো!"
মৃত মোহাম্মদ মোরসালিন (২৪) নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে বাংলাবাড়ি নামে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার কানাইনগর গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে। স্ত্রী অনি আক্তার মিতু ও দুই সন্তান নিয়ে কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুরে ভাড়া থাকতেন। তার মেয়ের নাম হুমায়রা ইসলাম লামহা (৭) ও ছেলের নাম আমির হামজা (৪)। তাদেরকে নিয়ে গোছানো সংসার ছিল মোরসালিনের। টানাপোড়েন থাকলেও সংসারে সুখের কমতি ছিল না।
কিন্ত গত মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের ছাত্র ও নিউমার্কেট এলাকার দোকানিদের সাথে সংঘর্ষের সময় আহত হয় মোরসালিন। পরে তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষের সময় নুরজাহান মার্কেটের সামনের রাস্তায় মোরসালিনের মাথায় ইটের আঘাত লেগেছিল।
ঢামেকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল তাকে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান।
এরপর তার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করা হয় দুপুরে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মোরসালিনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মোরসালিনের মাথায় মাঝখানে গভীর জখম রয়েছে। কপালের ডান পাশে, নাকের বাম পাশে জখম রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
পরে তার বড় ভাইয়ের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর মোরসালিনের মরদেহ প্রথমে কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটি বাসা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেন (১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।