ঈদযাত্রা: ভোগান্তি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
যানজট ও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়সহ নানা দুর্ভোগের পাশাপাশি গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চযোগে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ঈদ যাত্রীরা। এদের মধ্যে ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন সীমাহীন। টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে তাদের এখন সিডিউল বিপর্যয় নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
২৭ এপ্রিল ঈদ সার্ভিসের প্রথম দিন থেকেই শিডিউল বিলম্ব শুরু হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রায় ১৫টি ট্রেন ছাড়ে। প্রতিটি ট্রেনই ২০-৪০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে।
কিন্তু, পরের দিনই ঘটে বিপর্যয়। ট্রেনগুলো কমলাপুর থেকে ১.৩০-২.৩০ ঘন্টা দেরিতে যাত্রা শুরু করে।
খুলনার এক যাত্রী মোরারক হোসেন বলেন, "আমাদের ভোগান্তি যেন শেষই হচ্ছে না। ১৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তীব্র গরম ও মশার কামড় খেয়ে টিকেট কেটেছি। এখন স্বস্তিতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব, তাও পারছি না।"
"আমি ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে এসেছি। ট্রেন ছাড়ার সময় এক ঘণ্টা পার হলেও এখনও ট্রেন স্টেশনেই ঢুকেনি। অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে গেছি, আর ধৈর্য রাখতে পারছি না," তিনি যোগ করেন।
সকালে নীলসাগর এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে নির্ধারিত শিডিউলের আড়াই ঘণ্টা পর। এছাড়া, সুন্দরবন এক্সপ্রেস কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টারও পর।
দেরির ব্যপারে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, "সকাল থেকে যে ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে, এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তিনটি ট্রেন একটু বিলম্বে ছেড়েছে। ট্রেনগুলোর লাইন জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত, সবগুলো সিঙ্গেল লাইন। সেখানে যতগুলো স্টেশন আছে, একটা স্টেশন থেকে আরেকটা স্টেশনের দূরত্ব অনেক বেশি। যার কারণে ক্রসিং এবং ডিফারেন্সের কারণে যে অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো, সেগুলো একটু দেরি হয়।"
মাসুদ বলেন, "পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে। এটা আমাদের মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত ডাবল লাইন না হবে ততদিন এই সমস্যাটা থাকবে। তবে পূর্বাঞ্চলে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা নেই।"
এদিকে জ্যামের কারণে বাসগুলোর গন্তব্যে পৌছতে অনেক বেশি সময় লাগছে। এর ফলে ঢাকায় দেরিতে আসছে বাসগুলো। তাই সেগুলো সময়মত যাত্রাও করতে পারছে না।
ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, "রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে যা ঈদে মানুষের চাপে আরও খারাপ আকার ধারণ করছে। ঢাকায় গাড়ি অনেক দেরি করে পৌঁছাচ্ছে। ফলে আমরা সময়মত গাড়ি ছাড়তে পারছি না। যাত্রীদেরও কষ্ট হচ্ছে।"
এদিকে গাবতলী স্টেশনসহ বিভিন্ন কাউন্টারে তেমন যাত্রীর চাপ দেখা যায় নি।
চাপ আছে পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে
বৃহস্পতিবার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে।
এইদিন ভোর থেকেই শুরু হওয়া চাপে দুপুর পর্যন্ত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক যানবাহন।
প্রচণ্ড রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও যাত্রীরা পারাপারের ভোগান্তিতে পড়েছে। পাটুরিয়া ঘাটেও এখন একই অবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে মাত্র ৯টি ফেরি যোগে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বড় ফেরি কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকা থেকে আসা এই রুটের যাত্রীরা।
ফেরির পাশাপাশি উভয় ঘাটেই মানুষ ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ও স্পিডবোট যাতায়াত করেছে। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
লঞ্চে ছিল না তেমন ভিড়
২৮ তারিখে ভিড় হবে এমন ধারণা থাকলেও লঞ্চে তেমন কোনো ভিড় ছিল না এইদিন। দিনের লঞ্চগুলো চলেছিল প্রায় ফাঁকা, রাতের লঞ্চেও যাত্রী ছিল সাধারণ সময়য়ের মতই। কোনো চাপ ছিল না।
সদরঘাটে পারাবত ১২ লঞ্চের মাস্টার জাহাঙ্গির মিয়া বলেন, "আজ ১১টি লঞ্চ বরিশাল ছেড়ে যাবে। কিন্তু তেমন কোনো যাত্রী নেই। এর থেকে স্বাভাবিক সময়ে বেশি যাত্রী পাই।।"