এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, এমন প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সীমিত করল সরকার
ডলার সংকটে পড়ার আগেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রকল্পটি এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, সেসব প্রকল্প ছয় মাস বা আরও পরে বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের অনুমোদন না দিতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব তথ্য জানান।
ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ এবং এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মন্দা পরিস্থিতির পূর্বাভাস ছাড়াও রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার সন্তোষজনক রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। এই সময়ে অহেতুক ব্যয় করতে চাচ্ছে না সরকার। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ে সরকার খুবই সতর্ক রয়েছে। এজন্য বিলাসপণ্যের আমদানিও যাতে কম হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের বিষয় রয়েছে এবং এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয় সেগুলো পরে বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার এই অস্বাভাবিক সময়টি ম্যানেজ করার জন্য যা করা প্রয়োজন, তাই করছে।
সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসপণ্যে এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে লাগাম টানার ইঙ্গিত আছে। সরকার কোনো কারণে শংকিত কি না?
'বিষয়টি সহজ। সময় যখন কঠিন, সিদ্ধান্তও কঠিন নিতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। বিশ্বের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যতদিন বহির্বিশ্বে অস্থিরতা থাকবে ততদিন এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে কঠিন মানে এমন নয় যে সবকিছু বন্ধ করে ফেলা হবে। বিলাসপণ্য পরে কেনা যাবে,' জবাবে জানান অর্থমন্ত্রী।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এখন যে সফরগুলো হচ্ছে, সেগুলো আগে অনুমোদন দেওয়া ছিল। এখন থেকে আর বিদেশ সফরের ঢালাও অনুমোদন দেওয়া হবে না। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নতুন করে বিদেশ ভ্রমনের অনুমোদন না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে আপাতত বিদেশ সফর আর নয়।
জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপির হিসাব মেলাতে গেলে, যেখান থেকে এই হিসাব করা হয়েছে তাদের সঙ্গে সংশয়বাদীদের বসতে হবে। তবে জিডিপির হিসাব যেভাবে করা হয়, সেভাবেই করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে কোনো সন্দেহও নেই।
তিনি বলেন, 'সব কাজে সব সময় সন্দেহ করার দরকার নেই। সবাই এদেশের মানুষ। দেশের ভালো সকলেই চায়। সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে সেগুলো জনগণের জন্যই প্রকাশ করেছে। ফলে জিডিপির হিসাব কীভাবে করা হয়েছে তাও প্রকাশ করা হবে।'
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, 'সবচেয়ে বড় সন্দেহকারী বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফও সরকারের তথ্যে আপত্তি করে না। বরং সরকারের সঙ্গে একমত।'