এই প্রথম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন দেখেছি: দমকল কর্মী
আমার চাকরির বয়স ৬ বছর। এই সময়ে চট্টগ্রামে ছোট-বড় সাড়ে তিন শতাধিক আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছি। কিন্তু এই প্রথম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন দেখেছি। আমাদের আসলে কিছু করার ছিল না। কারণ কন্টেইনারের ভেতরে কেমিক্যাল রয়েছে। কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানি দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
রোববার (০৫ জুন) ভোর ৫টার দিকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম এভাবেই বলছিলেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
ঘটনাস্থলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি দ্বিতীয় ধাপে এসেছি। আমাদের উদ্ধার কর্মীরা সবসময় এসে ঝাপিয়ে পড়েন। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু বিস্ফোরণের কুমিরা স্টেশনের লোকজন আহত হয়েছেন। তাই কাছে যাওয়া নিষেধ।"
শনিবার (০৪ জুন) রাত সোয়া ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কন্টেইনারের ভেতরে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ ছিল। সেখান থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। এরপর একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। উদ্ধার কাজে এসে বিস্ফোরণে দমকল বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন।
রোববার ভোর ৫টার দিকেও ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে সীতাকুণ্ডের আকাশজুড়ে কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। বাতাসে রাসায়নিকের গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তখনও থেমে থেমে বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আগুন জ্বলছিল প্রায় চার শতাধিক কন্টেইনারে। অগ্নিকাণ্ডের স্থানে একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে। মূলত রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের কারণে বিস্ফোরণ হয়। এতে দমকল বাহিনীর অন্তত ২১ সদস্য আহত হয়েছেন। এরপর থেকে নিজেদের নিরাপত্তায় দূরে অবস্থান করতে শুরু করেন তারা।
আরেক দমকমকর্মী অমর নাথ ভোর ৫টার দিকে ক্লান্ত অবস্থায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাধারণ আগুন এবং কেমিক্যালের আগুনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কেমিক্যালের আগুনে নীল হয়ে পুড়ে যায়। এখানের আগুনের কারণে আমাদের অনেকে হাতের আঙ্গুল সাদা হয়ে গেছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে গেছেন। আসলে আমাদের কিছু করার নেই।"
শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টেশনের উদ্ধারকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নিয়েছেন। এরপর দমকল কর্মীরা আহত হওয়ার পর আগ্রাবাদ, বায়েজিদ, বন্দর, কালুরঘাট, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, ফেনী সোনাগাজী স্টেশন ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, আনসার, রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররাও অংশ নিয়েছিলেন উদ্ধার অভিযানে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে কন্টেইনার ডিপোটি অবস্থিত। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতই ছিল যে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়। ডিপোর মুখে এসে রাসায়নিকের ড্রাপ ছিটকে পড়ে। পার্কিং করা অনেকগুলো ট্রাকের কাঁচ ভেঙে যায়। উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার সময় ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ওপর দিকে ট্রাক যাওয়ায় ফেটে যায় কিছু পাইপ। আবার দূর থেকে পানি নিক্ষেপ করায় পানির কিছুটা সংকটও দেখা দেয়। পরে রাত ২টার পর পাশের একটি পুকুরে পাম্প বসানো হয়। ভোরের দিকে আগুনের তীব্রতা কমতে শুরু করে। সাড়ে ৫টার পর থেকে দমকল বাহিনীর কর্মীদের আরও বেশি তৎপর হতে দেখা যায়।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পানির সংকট ছিল না। এগুলো কেমিক্যাল; পানি দিয়ে তো আর নেভানো যায় না। আমাদের অনেক জন আহত হয়েছেন। তাই আমরা নিরাপদদূরত্বে থেকে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি।"