ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে কেন গোলাপি পাউডার ছিটানো হচ্ছে?
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল নিয়ন্ত্রণে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। আগুন নেভাতে আকাশপথে ট্যাঙ্কার থেকে গোলাপি ও লাল রঙের গুঁড়া ফেলার দৃশ্য এখন পরিচিত এক ছবি। দাবানল মোকাবিলায় ব্যবহৃত এই পদার্থটি পুরো এলাকাজুড়ে বাড়িঘর, সড়ক এবং গাড়িগুলোকে আচ্ছাদিত করে ফেলেছে।
অগ্নি প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত এই পদার্থের নাম ফস-চেক। এটি প্রস্তুত করে পেরিমিটার নামে একটি কোম্পানি। ১৯৬৩ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও অগ্নি নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এটি ব্যবহার করছে। ২০২২ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অগ্নিনির্বাপক পদার্থ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফস-চেকের সঠিক ফর্মুলা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে কোম্পানির আগের নথি অনুযায়ী, এই পদার্থের ৮০ শতাংশ পানি, ১৪ শতাংশ সারজাতীয় লবণ এবং ৬ শতাংশ রং ও ক্ষয়রোধক উপাদান নিয়ে গঠিত। পেরিমিটার জানিয়েছে, ফস-চেকের উজ্জ্বল গোলাপি রঙ পাইলট ও অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের এলাকাগুলো সহজে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। সূর্যের আলোয় কয়েকদিনের মধ্যে এই রঙ ফিকে হয়ে মাটির রঙে পরিণত হয়।
এই অগ্নি প্রতিরোধক সাধারণত দাবানলের চারপাশে আগুনপ্রবণ উদ্ভিদ ও জমিতে স্প্রে করা হয়, যাতে আগুন ওই এলাকায় ছড়াতে না পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বন বিভাগ জানিয়েছে, এই অগ্নি প্রতিরোধক আগুনের জ্বালানি উপকরণের ওপর একটি প্রলেপ তৈরি করে জ্বালন হার কমিয়ে আগুনের প্রসার রোধ করে। এটি জ্বালানি থেকে অক্সিজেন সরিয়ে আগুনের তাপমাত্রা কমায় এবং ইনঅর্গানিক লবণ জ্বালানির পোড়ার ধরন পরিবর্তন করে আগুনের বিস্তার ধীর করে দেয়।
সম্প্রতি দাবানল চলাকালীন আকাশ থেকে ফেলা গোলাপি গুঁড়া গাড়ি ও সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। পেরিমিটার কোম্পানি পরামর্শ দিয়েছে, নিরাপদ হলে যত দ্রুত সম্ভব এই গুঁড়া পরিষ্কার করতে হবে।
তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, 'গুঁড়া শুকিয়ে গেলে এটি পুরোপুরি পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে যায়।' ছোট পৃষ্ঠে পরিষ্কারের জন্য গরম পানি ও হালকা ডিটারজেন্ট কার্যকর। বড় পৃষ্ঠের ক্ষেত্রে প্রেসার ওয়াশার ব্যবহার করার সুপারিশ করেছে কোম্পানিটি।
ফস-চেকের ব্যবহার পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে অতীতে বিতর্কিত হয়েছে। ২০২২ সালে ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফর এনভায়রনমেন্টাল এথিক্স নামে একটি সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের বন বিভাগের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। সংগঠনটি দাবি করে, বিমান থেকে বনাঞ্চলে রাসায়নিক অগ্নি প্রতিরোধক ফেলা দেশের পরিষ্কার পানি আইন লঙ্ঘন করে। অভিযোগে আরও বলা হয়, এই রাসায়নিক মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করে এবং কার্যকর নয়।
পরের বছর একজন মার্কিন জেলা বিচারক কর্মীদের দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করলেও তার রায়ে বন বিভাগকে এই অগ্নি প্রতিরোধক ব্যবহারের অনুমতি দেন, যতক্ষণ না তারা এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) থেকে অনুমতি পায়।
বন বিভাগ এনপিআরকে জানায় যে তারা এ বছর ফস-চেকের এক ধরনের ফর্মুলা, ফস-চেক এলসি৯৫—ব্যবহার বন্ধ করে এর পরিবর্তে এমভিপি-এফএক্স ব্যবহার করছে, কারণ এটি বন্যপ্রাণীদের জন্য কম বিষাক্ত।
বন বিভাগ সংবেদনশীল পরিবেশগত এলাকায় যেমন জলপথ ও বিপন্ন প্রজাতির বাসস্থানে অগ্নি প্রতিরোধক ফেলার ওপর বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে 'মানুষের জীবন বা জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে' এ নিষেধাজ্ঞার কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে।