উদ্বোধনের পরেও শিশুরা খেলতে পারে না বনানীর দুটি পার্কে
- বনানী ব্লক-সি পার্কটি সারাদিনে খোলা থাকে ৫ ঘণ্টা, বন্ধ থাকে খেলার মাঠ
- চালু হয়নি পাবলিক টয়লেট ও অন্যসব সেবা
- মাঠে ও পার্কে নেই নিয়মিত পরিচর্যা, জন্মেছে আগাছা
- ব্লক-এফ এর বৈশাখী পার্কটিতে দেখা যায় না শিশুদের
- ব্লক-এফ পার্কে শিশুদের জন্য খেলনা বসালেও ব্যবহারের সুযোগ নেই
- উত্তর সিটি বলছে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পার্ক খোলা থাকবে সারাদিন
স্কুল ছুটি হলে বিকেল সাড়ে চারটায় বনানী ব্লক-সি পার্কে খেলার উদ্দেশ্যে আসেন বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আদনান। কিন্তু পার্কের প্রবেশ ফটকে তালা দেওয়া থাকায় প্রাচীরের উপরে উঠে পার্কে প্রবেশ করেন তিনি। উপর থেকে লাফিয়ে পড়ায় পায়ে ব্যথাও পায় আদনান।
তার সাথে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত হোসেনও প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে পার্কে প্রবেশ করেন। তবে পার্কের মধ্যে খেলার মাঠটিতে তালা দেওয়া থাকায় সেখানে খেলার সুযোগ নেই কারো। তাই পার্কের যে খেলনাগুলো বসানো আছে সেখানেই খেলাধুলা করেন কয়েকজন।
মো. আদনান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্কুল ছুটির পরে এক ঘণ্টা খেলার সুযোগ পাই, তাই দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে আমরা খেলাধুলা করি। তবে খেলার মাঠটি সবসময়ই তালাবদ্ধ থাকে। যদি আমাদের জন্য খুলে দেওয়া হতো তাহলে কিছু সময় খেলাধুলা করতে পারতাম।"
বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্কটি। তখন পার্কে প্রবেশ করে খেলাধূলা করার সুযোগ পায় শিশুরা, তবে খেলার মাঠ বন্ধ থাকায় পার্কেই খেলে তারা।
অথচ, বনানীর সি-ব্লক এর এই পার্ক এবং এফ-ব্লকের বৈশাখী পার্কসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭টি পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ শেষে গত ১৬ এপ্রিল এগুলোর উদ্বোধন করা হয়। সেসময় পার্ক ও মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
কিন্তু সম্প্রতি বনানীর পার্ক দুটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বনানীর সি-ব্লক পার্কটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। এর তেতরের খেলার মাঠটি সবসময়ই থাকে তালাবদ্ধ; ফলে ঘাসগুলো বেড়ে এক ফুটেরও বেশি লম্বা হয়েছে।
পার্কের ভেতরের ঘাসগুলোও কাটা হয়না কয়েকদিন ধরে। জন্মেছে আগাছাও। সি-ব্লক পার্কটিতে হাাঁটার জন্য কিংবা সময় কাটাতে বনানীর আশপাশের লোকজন আসলেও পার্কটি বন্ধ দেখে অনেকেই ফিরে যায়।
শুধু পার্কে হাঁটার জন্য এবং শিশুদের জন্য বসানো খেলনা ব্যবহারের জন্য সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা এবং বিকেল ৫ টা থেকে ৭ টা- এই ৫ ঘণ্টা পার্ক খোলা রাখা হয় বলে জানান পার্কটিতে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মো. দেলোয়ার হোসেন।
এছাড়া পার্কের মধ্যে অফিসরুম, জিমনেশিয়াম কিছুই চালু করা হয়নি। পার্কের সাথেই করা পাবলিক টয়লেটের কাজ সমাপ্ত হলেও সেটিও থাকছে বন্ধ।
এ এলাকায় বসবাসকারী ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "যখন পার্কটি খোলা হয় তখন আমরা খেলার সময় পাই না। দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করতে পারলেও মাঠে প্রবেশের সুযোগ নেই। আমরা আমাদের খেলার জায়গা, হাঁটাচলার জায়গা চাই।"
অপরদিকে বনানীর এফ-ব্লকে বৈশাখী পার্কটি এতোদিন বনানী সোসাইটি পরিচালনা করে আসছে। এ পার্কের ৪০ জন সদস্য নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করে আসছে।
এ পার্কটিতে কয়েকমাস আগে উন্নয়ন কাজ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। পার্কের দুই পাশে দেয়াল ও রেলিং এবং গেইট করে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সাথে বসানো হয়েছে শিশুদের জন্য দোলনাসহ বেশ কয়েকটি খেলনা।
কিন্তু পার্কটি উদ্বোধন হলেও খেলনাগুলো ব্যবহার করতে পারছে না শিশুরা। ফলে শিশুদের পদচারণা না থাকায় পার্কটি একপ্রকার প্রাণহীন অবস্থায়ই পড়ে থাকে।
এ পার্কের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা মো. সোহাগ টিবিএসকে বলেন, "এ পার্কটিতে আগে মানুষ আসতো অনেক কিন্তু এখন তেমন লোকজন আসে না। সকালে ১৫/২০ জন এবং বিকেলে ২০/২৫ জন হাঁটতে আসেন। সিটি কর্পোরেশন কাজ করে উল্টো পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। শিশুদের জন্য খেলনা বসিয়েছে প্রায় দুই মাস হলো কিন্তু শিশুরা ব্যবহার করতে পারছে না। খেলনা দেখে শিশুরা পার্কে আসলেও তা আটকানো দেখে আবার ফিরে যায়।"
এ এলাকার ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার টিবিএসকে বলেন, "এ পার্কে আঙ্কেল/আন্টিরা হাঁটেন তাই আমরা খেলতে যাই না। তবে খেলনা বসিয়েছে দেখে গিয়েছিলাম, পরে শুনলাম খেলনা ব্যবহার করা যাবে না তাই আর পরে যাইনি। খেলনাগুলো ব্যবহার করতে দিলে বন্ধুদের সাথে খেলতে পারতাম।"
২০১৭ সালে 'ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৮টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
এর মধ্যে বনানীর সি-ব্লক পার্ক এবং এফ-ব্লকের বৈশাখী পার্কসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭টি পার্কের আধুনিকায়নে উত্তর সিটির খরচ হয়েছে ২৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
উদ্বোধনের সময় উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম সাত দিনের মধ্যে এসব পার্ক ও মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুই মাস পরে এসেও সেই পার্ক ব্যবহার করতে পারছে না শিশুরা।
এ বিষয়ে উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ মাহে আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে দপ্তরে জয়েন করায় এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন টিবিএসকে বলেন, "পার্কগুলো তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে এবং দামি দামি খেলনা বসানো হয়েছে। তাই এগুলো রক্ষণাবেক্ষনের জন্য দায়িত্ব দিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করলে তখন পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে।"
এখন সাময়িকভাবে স্থানীয় কাউন্সিলর, অঞ্চল নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পার্কগুলো যাতে শিশুরা ব্যবহার করতে পারে তাই উদ্বোধন করা হয়েছিল। এজন্য সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকে।"
টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই পার্ক দুটিতে শিশুরা নিয়মিত খেলতে পারবে বলে জানান তিনি।