জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
আগামী নির্বাচনে সবগুলো আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছে ৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তবে তারা এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে।
রোববার (১৯ জুন) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইভিএম বিষয়ক মতবিনিময় সভায় দলগুলোর প্রতিনিধিরা এ মতামত দেন।
ইসি আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা।
তারা বলেন, জনগন এখনও ইভিএম বিষয়ে ভালো বোঝে না।
এদিকে বৈঠকের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কমিশন কারও ওপর তার মতামত চাপিয়ে দিতে চায় না।
রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে রোববার প্রথমদিনে ১৩ টি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে অংশ নেয় ১০টি দলের প্রতিনিধি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং আন্দালিভ রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আমন্ত্রণ পেয়েও বৈঠকে অংশ নেয়নি।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার চায় না। সংলাপে অংশ নিয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, "আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু সারাদেশে ৩০০ আসনের ভোটগ্রহণ ইভিএমে হলে এটা হ্যাপাজার্ড (এলোমেলো অবস্থা) হয়ে যাবে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো মানুষের প্রস্তুতি নেই। মানুষ ভোট দিতে চায়। কিন্তু মেশিনের বিষয়ে আমাদের ধারণা ভুল। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক তা আমরা চাই না।"
জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, "আমি প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে। ইভিএমে ভোট নেওয়া হলে ৩০০ আসনের সব আসনেই নিতে হবে। সব আসনে না হলে বৈষম্য হবে।"
গণফ্রণ্টের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, "এই নতুন প্রযুক্তি এখনও সবাই বুঝে না। সবার কাছে বোধগম্য হওয়ার পূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে চালু করা যেতে পারে। আবার অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের এই ব্যপারে আপত্তি থাকলে নির্বাচন কমিশনকে সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে।"
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, অনেক দেশ ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন করা থেকে সরে এসেছে। বাংলাদেশেও এটি নিয়ে বিতর্ক আছে।"
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখনও এ প্রযুক্তিকে ডিজিটাল কারচুপি বলে।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, "যে কোনো প্রস্তাবই গঠনমূলক। আলোচনা মূল্য দিয়ে বিবেচনা করবো। ইভিএমের ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য ইতিবাচক, আবার অনেকে বলেছেন ইভিএম ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। কিন্তু ইভিএমের অনেক বিষয় ওনাদের অজানা ছিল। মিটিংয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলেছেন।"
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯ টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে ইভিএম বিষয়ে মতবিনিময় করবে কমিশন।