আব্দুল আলীমের সর্বনাশা পদ্মার ওপর স্বপ্নের পদ্মা সেতু
আমার দিন যে গেল সন্ধ্যা হলো
তবু না কুল পাই...
কুল কিনারা নাই
ও নদীর কুল কিনারা নাই
খ্যাতনামা গীতিকার আব্দুল লতিফের লেখা ও সুর করা 'সর্বনাশা পদ্মা নদী' গানে এভাবেই উঠে আসে খরস্রোতা পদ্মা নদীর বিভীষিকাময় রূপের কথা।
১৯৫২ সালে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানের সুরকার আব্দুল লতিফের লেখা এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন লোক সঙ্গীতের অন্যতম নক্ষত্র আব্দুল আলীম।
উত্তাল পদ্মা নদী পারাপারের সময় মাঝির কণ্ঠে নদীর ধ্বংসাত্মক দিকটি তুলে ধরা হয়েছে এই গানে। চিত্রিত হয়েছে নদী ও মাঝির একমুখী কথোপকথনের আকারে। একসময়ের এই উত্তাল নদীকেই এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে পদ্মা সেতু।
কিন্তু, এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ধাপে ধাপে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং সেসব সামাল দিতে পরিবর্তন করতে হয়েছে সেতুর নকশাও। প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।
দুটি পৃথক ডেকের একটিতে চলবে ট্রেন, অন্যটিতে যানবাহন।
বহুল প্রতীক্ষিত এই সেতু চালু হলে দেশের মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে ফেরিপথে যাত্রা করতে হবে না আর। এমনকি, পদ্মায় ঝড় উঠলেও প্রাণের ভয় থাকবে না তাদের; যেমনটি ছিল আব্দুল লতিফের গানের মাঝির।
পদ্মারে তোর তুফান দেইখা
পরান কাঁপে ডরে
ফেইলা আমায় মারিসনা তোর
সর্বনাশা ঝড়ে…
সারা বিশ্বে খরস্রোতা যতো নদী আছে তার মধ্যে একটি বাংলাদেশের পদ্মা। এই নদীতে প্রবাহিত পানির পরিমাণ, নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা- এসব কারণে এর উপর সেতু নির্মাণ করা ছিল অসম্ভব রকমের কঠিন এক কাজ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় আট বছরের নির্মাণ কাজ শেষে চালু হচ্ছে এই সেতু। এতে দেশের মানুষের পাশাপাশি সেটি অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।