শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙন: আশ্রয়হীন দুই শতাধিক পরিবার
শরীয়তপুরে জাজিরা উপজেলার পদ্মার মধ্যবর্তী পাইনপাড়ার চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে দিশেহারা নদী পাড়ের হাজারও মানুষ। প্রতিদিনই ভাঙছে ফসলি জমি, বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গত তিন সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। খোলা স্থানে প্রতিকূল পরিবেশে দিন পার করছেন এসব অসহায় ভাঙন কবলিতরা। খাদ্য, স্যানিটেশন আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে আশ্রয় নেয়া মানুষ।
রোববার পাইনপাড়া চরে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে তীর ভেঙে পড়ছে। ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে কেউ বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ ইঞ্জিন চালিত নৌকায় দিচ্ছেন পদ্মা পাড়ি। গেল তিন সপ্তাহ ধরে এই চরে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চরের অন্তত তিন শতাধিক পরিবার।
ঘর সরানোর কাজে ব্যস্ত সাহেদ মাঝি। এরই মাঝে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, "নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিনিয়ত অবৈধ ড্রেজার দিয়ে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা বালু কেটে নেওয়া হয়। এ কারণেই নদী ভাঙছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। ঘর আর আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে পারবো কিনা জানি না। আর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো তাও জানি না। আমাদের দেখার কেউ নেই।"
ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো অবশিষ্ট সহায়সম্বল নিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে ছুটছে আশ্রয়ের সন্ধানে। মাঝিরঘাট এলাকার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পড়ে থাকা খোলা জায়গায় অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা।
তাদের মধ্যে রয়েছে সোমর আলী শেখ আর রাবিয়া খাতুন প্রবীণ দম্পতির পরিবার। ৫৭ বছরের সংসার জীবনে তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলেন ৮ বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা আর গৃহপালিত কয়েকটি পশু। এবারের ভাঙনে সব হারিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী মাঝিরঘাটের ওই জমিতে।
সোমর আলী শেখ বলেন, "জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন অসহায় হয়ে যাবো ভাবিনি। বাতাস, বৃষ্টি আর রোদে পুরে জীবন এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কোথায় যাব, কি খাবো আর এখানেই কীভাবে ঘর তুলবো জানা নেই। যেখানে খাবার জোগাড় করতে পারছি না সেখানে স্ত্রীর জীবন রক্ষা ওষুধের কথা ভুলেই গেছি। আমাদের সাহায্য তো দূরের কথা, কেউ দেখতেও আসেনি।"
সোমর আলী শেখ আর রাবিয়া খাতুনের মতো ভাঙনের শিকার দুই শতাধিক পরিবার নদী পারি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মাঝিরঘাটের বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পড়ে থাকা জমিতে ও পাশের বালুর মাঠে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে আশ্রয়হীন মানুষের তালিকা। বৈরী আবহাওয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও অনেকে তৈরি করতে পারেননি। বৃষ্টির পানি জমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে আশ্রয়স্থলটুকুও। আয় রোজগার না থাকায় দু'বেলা খাবার জোটানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ এসব মানুষের।
শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, "কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভাঙন চলছে। এখন ভাঙন কিছুটা বেড়েছে। আমরা এরই মধ্যে ১৫০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিদিনই ভাঙনের শিকার হচ্ছে ওই চরের বাসিন্দা। বর্তমানে দুইশতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের স্থায়ী আশ্রয়ের জন্যও প্রশাসন কাজ করবে।"
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, "নদীতে তীব্র স্রোত ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। ইতোমধ্যে দেড় কিলোমিটারের ওপরে চরটি ভেঙে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে প্রতি বছরই আমরা জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করি। এ বছরও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। অর্থ পাওয়া গেলে শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু হবে।"