নেত্রকোনায় বন্যার পানি কিছুটা কমলেও কমেনি দুর্ভোগ
নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজন এখনও বাড়ি ফেরা শুরু করতে পারেনি। জেলা প্রশাসনের হিসাবে ৮২ হাজার ২২০টি পরিবার এখনও পানিবন্দী। ১ লাখ ১২ হাজার ৬০৬ জন মানুষ এখনও ৩৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকেলে জানান, কলমাকান্দা উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। আর খালিয়াজুরীতে পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এছাড়া দুর্গাপুর ও বিজয়পুর পয়েন্টে সোমেশ্বরী এবং জারিয়া পয়েন্টে কংস নদীর পানি বিপৎসীমার বেশ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জেলার প্রতিটি নদীর পানিই কমছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় কমেছে পাহাড়ি ঢলের স্রোতও।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কিছু ত্রাণসামগ্রী পৌঁছলেও যারা পানিবন্দী অবস্থায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন- তাদের অনেকে এখনও কোনো ত্রাণ পাননি।
খালিয়াজুরীর নগর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের আকাশ সরকার জানান, ওই গ্রামের ৬০-৭০টি পরিবার বন্যাদুর্গত। কিন্তু এ পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছে মাত্র ছয়টি পরিবার। এরমধ্যে পাঁচটি পরিবার বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত। গ্রামের বাকি পরিবারগুলো কোনো সরকারি ত্রাণের নাগাল পায়নি।
একই ইউনিয়নের বল্লভপুর, খোশালপুর নয়াপাড়া, বাঘাটিয়া, চানপুর নয়াপাড়া, নয়াগাঁও, মেন্দিপুর ইউনিয়নের খলাপাড়া, বলরামপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আকাশ সরকার আরও বলেন- বন্যার পানি মাড়িয়ে ধান, সহায়-সম্পদ ও গরু-বাছুর নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া কষ্টকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কষ্ট করে অনেকে পানিবন্দী বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তারাই ত্রাণবঞ্চিত হচ্ছেন। এসব পরিবারের অনেকের ঘরে ধান থাকলেও রান্নার সুবিধা নেই। অনেকের রান্নাঘরই ডুবে গেছে। রান্নার জ্বালানিও নেই অনেকের।
জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা সদরের বেসরকারি সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও তাদের বেশিরভাগ দুর্গম এলাকায় যাচ্ছেন না। সহজপথে কাছাকাছি এলাকায় ত্রাণ দিয়ে চলে আসছেন তারা। নিম্ন আয়ের বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষজন অর্থ সঙ্কটে ভুগছেন।
খালিয়াজুরীর হাওড় আন্দোলনের সংগঠক স্বাগত সরকার শুভ বলেন, ত্রাণ সঙ্কটের চেয়েও বড় সঙ্কট হচ্ছে হাওড়ের ভাঙ্গন। উপজেলার ৭০টি গ্রামই এখন পানিবন্দী। হাওড়গুলো পানিতে টইটম্বুর। সামান্য বাতাসেই সেখানে ঢেউ উঠছে। সে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে গ্রামগুলোতে। এ কারণে বিভিন্ন গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। শুভ বলেন, এবছর বর্ষা বেশ আগেভাগে হওয়ায় কেউই বাড়িঘরের পাশে বাঁধ দিতে পারেননি। অন্য সময় তারা বাড়ির পাশে বাঁশ, খড়, কাঠ ইত্যিাদি দিয়ে এক ধরনের প্রাচীর নির্মাণ করেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, বুধবার নাগাদ ১০ উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকায় ৩৬২ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার ৬শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।