দুই-তিন ঘণ্টার নদীপথ এখন পাড়ি দেওয়া যাবে ৭-৮ মিনিটে
লঞ্চে-ফেরিতে করে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে আগে যেখানে গড়ে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সে পারাপারে সময় লাগবে ১০ মিনিটেরও কম।
বিশেষ করে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়া পর্যন্ত আসতে মোটরযানগুলোর লাগবে মাত্র ৭-৮ মিনিট।
কারণ, গতকাল (২৫ জুন) উদ্বোধনের পর আজ ভোরেই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু।
সেতুর গেট খোলার আগ পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্সকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেতু) মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন জানান, "সেতুর দুই প্রান্তের টোল প্লাজাগুলো ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়।"
"প্রথম দিকে মোটরসাইকেলের চাপ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বাস-মিনিবাস প্রাইভেটকারের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। তবে, পদ্মা সেতু পার হওয়া এবং দেখার জন্যই উৎসুক জনতার সংখ্যাটাই বেশি," যোগ করেন তিনি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শেষ হলো। রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণের জেলাগুলোর স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় এই সেতু চালুর আগে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো সীমা ছিল না।
নদীতে ফেরি করে পারাপারের সময় মানুষের দুর্ভোগ ছিল বছরজুড়ে। শীতকালে নদীর বুকে ঘন কুয়াশা বা বর্ষায় তীব্র স্রোতে প্রায়ই বন্ধ থাকতো মাওয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কার্যক্রম। ফেরির অপেক্ষায় বসে বসে মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না।
ঈদ ও অন্যান্য ছুটির সময়ে ফেরির অপেক্ষায় যানজট সৃষ্টি হতো ঘাটে। কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কখনোসখনো এই যানজট দূর হতে কয়েকদিন লেগে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রমত্তা পদ্মার বুক চিড়ে কোনো সড়ক সংযোগ না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের পথেই শারীরিক অবনতি ঘটতো, ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে অপেক্ষা করতে করতে এভাবেই মারা গেছেন অনেকে।
পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা এখন সড়কপথে সরাসরি ঢাকা আসতে পারবেন। ফেরিঘাটের বিভীষিকাময় দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছে। সেতু দিয়ে তারা মাত্র কয়েক মিনিটে নদী পার করতে পারবেন। ঘাটে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের কাহিনি এবার চিরদিনের মতো বিদায় নেবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেল সংযোগ। ছয় মাস পর যাত্রীরা ট্রেনে করেও সেতু পাড়ি দিতে পারবেন।
বাগেরহাটের মোংলা বন্দর এবং সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে মালামাল পরিবহনে নতুন গতি যোগ করবে এ সেতু। সহায়ক হবে রপ্তানি বাণিজ্যে এবং স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহকে সহজতর করবে।
বর্তমানে খুলনা থেকে প্রতিদিন ১৬০ টন চিংড়ি ঢাকায় আসে। এছাড়া, মোংলা বন্দর দিয়ে বছরে ৫০০ কোটি টাকার পাট রপ্তানি করা হয়।
সেতুর সাথে নির্মিত হয়েছে একটি গ্যাসের পাইপলাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোয় গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূলক পশ্চাদপদ এ অঞ্চলে পাইপলাইনে আসা গ্যাস শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।