পদ্মা সেতুতে থানা এলাকার সীমানা নিয়ে জটিলতা
বহুল আকাঙ্খিত পদ্মা বহুমুখী সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই দুজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্বকভাবে আহত হবার পর মারা যান। এমন দুর্ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে সব ধরনের মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ করেছে সেতু বিভাগ। তবে, পুরো পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য অনুপাতে তিনটি থানার এলাকা বণ্টনে দুর্ঘটনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৬ জুন) রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যে দুজন মারা গেছেন- মো. আলমগীর হোসেন (২৫) ও মো. ফজলু (২৫)। তাঁরা ঢাকার দোহার–নবাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। আলমগীর মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। আর বিদেশে থাকতেন ফজলু। এক মাস আগে দেশে আসেন তিনি। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার প্রথম দিনে মোটরসাইকেলে পদ্মা সেতুতে ঘুরতে যান দুজন। পরে সেতুর মাঝামাঝি এলাকায় দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে মারা যান।
নিহতদের বন্ধু জয়দেব টিবিএসকে বলেন, 'আমরা একসাথে পদ্মা সেতু দেখতে গিয়েছিলাম। আমি যখন সেতুর নিচে উত্তর প্রান্তে, তখন ফোনে দুর্ঘটনার খবর পাই। এরপর সেতুর উত্তর পার থেকে পিকআপে তাদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। তবে ওই সময় কোনো পুলিশ ছিল না। এরপর আমার সাথে পুলিশ পরিচয়ে অনেকে যোগাযোগ করেছে- কিন্তু তাদের পরিচয় সর্ম্পকে বিস্তারিত মনে পড়ছে না।'
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, পদ্মাসেতুর ১ নম্বর পিয়ার থেকে ১৬ নম্বর পর্যন্ত উত্তর থানার, ১৭ থেকে ৩২ পর্যন্ত শিবচর; এরপর ৩৩ থেকে ৪২ দক্ষিণ থানার এলাকা। বাইক দুর্ঘটনা আমার এলাকায় হয়নি। তবে কোন থানা এলাকায় হয়েছে, তাও জানি না।
এদিকে, পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি জানান যে, দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না। দুর্ঘটনা তার থানা এলাকায় ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো থানা এলাকায় যদি দুর্ঘটনা না ঘটে থাকে- তাহলে এই দুজন ব্যক্তি কোথায় মারা গেলেন?
নিহত দুজনের বন্ধু জয়দেব বলেন, তারা মাওয়া হয়ে জাজিরা প্রান্তে নির্বিঘ্নেই পৌঁছান। তবে জাজিরা থেকে মাওয়ার দিকে আসার সময় পদ্মা সেতুর মাঝামাঝি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েন। এদিকে, দুর্ঘটনার ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়ার দিকে আসার সময় ২৭-২৮ নম্বর পিয়ার এলাকায় মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এমনটা জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব। জুরিসডিকশন বা থানা আওতাধীন অনুযায়ী তা মাদারীপুরের শিবচর থানা এলাকার মধ্যে পড়ে, তবে দুর্ঘটনাস্থলে সেতু এলাকার উল্টো দিকের লেনে পুলিশের টহল গাড়ি দেখা গেলেও- তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান জয়দেব।
তিনি বলেছেন, তারা নিজেরাই একটা পিকআপ ভ্যানে করে মারাত্নক আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। জয়দেব অভিযোগ করেছেন, এমন জটিলতা না হলে, আশেপাশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে- তার বন্ধুরা হয়তো বেঁচে যেতেন।
এদিকে, মাদারীপুরের শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসাইন টিবিএসকে বলেন, 'পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও অপরাধের বিষয়ে দেখভালের জন্য আলাদা আলাদা থানা করা হয়েছে। সে হিসেবে সেতুতে দুর্ঘটনা বা নিরাপত্তার বিষয়ে তারাই সব ব্যবস্থা নেয়ার কথা। পদ্মা সেতুর ওপরে কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই।' তবে, ১৭ থেকে ৩২ নং পিয়ার পর্যন্ত মাদারীপুরের শিবচর থানার আওতাধীন হওয়ায় এটি তার দায়িত্বে পড়ে কিনা- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া টিবিএসকে বলেন, রোববার রাতে দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসাপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহের বিষয়ে শাহবাগ থানার জিম্মা দেয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মো. বায়েজীদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কোন হত্যা, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয়। সে বিষয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ বিষয়টি তদারকি করে। তবে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্লেস অব অকারেন্স অর্থাৎ যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে- সেই থানা এলাকার পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।'
পদ্মা সেতু থানা এলাকার জটিলতার বিষয়ে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জিহাদুল কবির টিবিএসকে বলেন, 'পিয়ারের জটিলতা এড়াতে ১-৪২ নম্বর পিয়ার ধরে দুটি ভাগে ভাগ করে পদ্মা উত্তর ও দক্ষিণ-দুই থানায় ভাগ করে দেয়া হবে। এই এলাকায় তারা টহল করবে, তবে মাঝের পিয়ারগুলো (১৭-৩২ নম্বর পিয়ার) এলাকায় কোন দুর্ঘটনা/অপরাধ ঘটলে তা মাদারীপুরের শিবচর থানা আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।'
পদ্মা সেতু থানা এলাকার সীমানা জটিলতা নিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ সভায় আলোচনা হয়েছে, তবে দ্রুতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও সমাধান আসবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্চের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি।