একটা দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে, যেন আমি ঘুমিয়েই ছিলাম: জেল থেকে ফিরে পরীমনি
মাদক মামলায় প্রায় এক মাস কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনি। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি ছাড়া পান।
পরীমনির মুক্তির অপেক্ষায় সকাল থেকেই কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সামনে জড়ো জন উৎসুক জনতা ও সাংবাদিকরা। তবে সেখানের গাড়ির সান রুফ উঠিয়ে ভক্তদের সঙ্গে সেলফি এবং সবার উদ্দেশে হাত নাড়লেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি।
পরীমনি বাসায় পৌঁছার পর বুধবার বিকেলে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক রুবেলের। কথোপকথনটি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য সরাসরি তুলে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন: কংগ্রাচুলেশন! আপনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, খুব ভালো লাগলো। আচ্ছা, কেমন লাগছে? কেমন ফিল করছেন?
পরীমনি: ফিলিংস তো নাই। হারায়া গেছে।
প্রশ্ন: কেন?
পরীমনি: মানে এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। রেগুলার লাইফ থেকে তো ব্রেক ছিল। ...এটা ডিসক্রাইব করা যাবে না এক কথায়।
প্রশ্ন: এমনি শারীরিকভাবে কেমন আছেন আপনি? অসুস্থ শুনেছিলাম। কী অবস্থা এখন?
পরীমনি: আমি বুঝছি না। আমি মোটা হয়ে গেছি?
প্রশ্ন: ওখানে খাওয়া-দাওয়া ভালো ছিল নাকি?
পরীমনি: ওখানের বিষয়টা নিয়ে আমি পরে বলব।
প্রশ্ন: আচ্ছা। কাজে ফেরার প্ল্যান করছেন কি না? কোনো ভাবনা আছে কি?
পরীমনি: আমি কারও সাথে কথা বলিনি। মাত্র আসলাম তো...মা খালি আসার পর একটু খাইয়ে দিল। পুটু (পরীমনির কুকুরের নাম) একমাস ধরে গোসল করে না। ওকে গোসল করালাম। এখন লবণ-পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছি।
প্রশ্ন: নানুভাই কেমন আছেন?
পরীমনি: নানুভাই ঠিকঠাক, আলহামদুলিল্লাহ্।
স্নাইপারের মতো বন্দুক তাক করে রেখেছে আমার ঘরের দিকে...এতগুলা ক্যামেরা। এটা তো ইনডিভিজুয়াল কোনো বাসা না, ভাড়া বাসা। আমি একটার মধ্যে থাকি, আর চারটার মধ্যে অন্য ফ্যামিলি থাকে। তো তারা খুব ডিস্টার্বড হয়। সবাই তো ক্যামেরার সামনে ইউজড টু না। ...আমাকে বাসা ছাড়ার জন্য নোটিশ দিয়েছে।
প্রশ্ন: নোটিশ দিয়ে দিয়েছে?
পরীমনি: দেবে না? আপনার বাসায় হলে রাখতেন? আমি রাখতাম? আপনি তো রাখতেন না।
প্রশ্ন: তা ঠিক।
পরীমনি: এখন আমার জন্য যে চারটা ফ্যামিলির ডিস্টার্ব হচ্ছে, আমিও তো একজন সচেতন নাগরিক হয়ে আমি এটা…
প্রশ্ন: অন্য কেউ হলে তো আপনিও মানতেন না। খুব স্বাভাবিক।
পরীমনি: আমিও মানতাম না। এটা কোনো...আমি মানব? আমি জীবনেও তো মানব না। আমার বাড়িওয়ালা অনেক ভদ্রলোক দেখে আমি আসার পর জিনিসটা জানিয়েছেন আমার ফ্যামিলিকে, সুন্দর করে। আমার বাড়িওয়ালা অনেক ভদ্র, এখনও সহ্য করছেন এগুলো। পুলিশ দেখছে, র্যাব দেখছে...সাংবাদিকরা নিচে মোবাইল নিয়ে...মানে জীবনটা অতিষ্ঠ করে ছেড়ে দিচ্ছে এরা।
প্রশ্ন: সাংবাদিকদের জন্য কিছু বলতে চান কি না। সাংবাদিক এবং ভক্তদের জন্য।
পরীমনি: তাদের সাপোর্টটা ছিল...একটা জিনিস রিয়েলাইজ করেছি এই কয়দিনের মধ্যে যে, আপনি যদি একজনকে মন থেকে শ্রদ্ধা করেন...ভালোবাসা তো আসলে শ্রদ্ধার জায়গা থেকেই হয়...ওইটা শত কিছু দিয়েও নাড়ানো যায় না। আমি তো আসলে তাদের জন্য। আমি তো একদিনে হুট করে পরীমনি হই নাই। অনেক অনেক...কতগুলো স্টেজ পার হয়ে আজকে এখানে এসেছি, এটা তো আমি জানি। আর যারা আমার সঙ্গে জার্নিটাতে ছিল, তারা দেখেছে আমার পুরোটা। এখন তো হুট করে তাদের মন থেকে পরীমনির নাম মুছে ফেলতে পারবেন না। পরীমনিকে এখন আসামি বানিয়ে সিলগালা লাগিয়ে দিতে পারবেন না। আমার হচ্ছে তাদের নিয়েই কাজ, তাদের নিয়ে চিন্তা, তাদের জন্য আমার সবকিছু। আমি বাকিটা আর কিছু মাথায় রাখতে চাই না।
প্রশ্ন : আর দুটো প্রশ্ন করব। হাতে মেহেদী দিয়ে যে লিখেছেন, এটা কাদের উদ্দেশ্যে?
পরীমনি: বিচদের (হাসি)। দুমুখো সাপ যারা আছে, অন্তরের মধ্যে জ্বলুনি, মুখে মুখে 'আই লাভ ইউ'। তাদেরকে। তোমাদের ভালোবাসার দরকার নাই।
প্রশ্ন : তাদেরকে আপনি চেনেন? চিনে ফেলেছেন কারা কারা?
পরীমনি: হ্যাঁ। ডেফিনেটলি। ডেফিনেটলি। তারা আমার জন্য কী করেছে...। ভাই, বিপদে যেদিন পড়বেন, সেদিন বুঝবেন। ...আমি না বুঝিই নাই। কী রে ভাই, যাদেরকে নিয়ে গলায় গলায় খাতির, এক প্লেটে খাওয়া...কই তারা?
প্রশ্ন : হ্যাঁ, সেটাই। তারা নাই। এবার পাবেন না তাদেরকে।
পরীমনি: তারা আছে তো। এই যে চলে এসেছি না? এখন আবার 'ওয়েলকাম ওয়েলকাম' বলছে।
প্রশ্ন : পুরো ঘটনাটা নিয়ে আপনি কিছু বলতে চান? মানে আপনার সঙ্গে যেটা হলো, পুরো ঘটনাটা, এটা নিয়ে কিছু বলার আছে?
পরীমনি: একটা দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে, যেন আমি ঘুমিয়েই ছিলাম। আমি তো ঘুমিয়েই ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি কী রে ভাই, ধুমধাম, পুরো ঘর ঝনঝন করে। তো ওই থেকে আমার দুঃস্বপ্নের শুরু হয়েছে। দুঃস্বপ্নটার ডিউরেশন ছিল ৭-৮ দিন। একটু দীর্ঘ দুঃস্বপ্ন আরকি। হুট করে বলাও যায় না। যেটাই হোক, বলব কেমন ছিল। ...আমি দুঃস্বপ্নভেদী...এটা আসলে থাকতে চাই। আমার তো সান্ত্বনা দেওয়ার মতো আরও দশজন নাই—যে বলবে, 'তুমি উঠে দাঁড়াও', 'তুমি ভেঙে পোড়ো না'। আমি তো ভাঙতেই চাই না, উঠে দাঁড়াব কী?
আমি ভাঙতেই চাই না। যারা আমাকে এসব নিয়ে বলছে, তারা আমাকে কতটুকু চেনে? তারা কি আমাকে দেখেছে, আমাকে যে গালিগুলো দিল? তো আমাকে যারা চিনবে, তাদের গালিগুলো আমার গায়ে লাগবে। আমার নানাভাই যদি আমাকে একটা বকা দেয়, তাহলে আমার গায়ে লাগবে। কারণ নানাভাই আমাকে জানে। তার ওই রাইটটা আছে। সে আমাকে জেনে-বুঝে তারপর আমাকে গালিটা দিচ্ছে, একটা বকা দিচ্ছে, তাই না? ওই রাস্তার কেউ এসে বস্তি-ফস্তি বললে আমি কি বস্তি হয়ে গেলাম? ... কোট পরা এক ভদ্রলোক যেতে যেতে আমাকে গালি দিল। ...এখন যাদের আমি চিনি না, এরা গালি দিলেও আমার কিছু যায়-আসছে না।
প্রশ্ন : বাসায় এসে কী খেলেন?
পরীমনি: বাসায় মা রান্না করেছে। মুরগির মাংস… (অস্পষ্ট)
প্রশ্ন : এই ২৭ দিন কী মিস করেছেন সবচেয়ে বেশি?
পরীমনি: আসলে...মিস কখনোই করিনি তেমন কিছু।
প্রশ্ন : কেন?
পরীমনি: জেলখানায় (অস্পষ্ট) ঘুমিয়ে ছিলাম। একটা লং ডিউরেশনের স্বপ্ন দেখছিলাম, যেটা কিনা দুঃস্বপ্ন। ওই স্বপ্নের মধ্যে মিসের কোনো জায়গা ছিল না। (হাসি)
প্রশ্ন : তাহলে কাজে ফিরবেন ডিরেক্টরদের সাথে কথাবার্তা বলে, তাই তো?
পরীমনি: হ্যাঁ। একটু ফ্রি-টি হয়ে সন্ধার পর দেখি একটু কমিউনিকেট করি। সবার সাথে মিটিং-ফিটিং করে যত দ্রুত আমি বাসা থেকে বের হয়ে একটু ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারি, তত তাড়াতাড়ি মনে হয় যে আমার আত্মার মধ্যে জানটা চলে আসবে।