কৌন বনেগা ক্রোড়পতিই কাল হলো, ৫ কোটি টাকা জিতে যেভাবে ছারখার সুশীলের জীবন!
ভারতীয় টেলিভিশনের পর্দার অন্যতম আলোচিত গেম শো 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'র (কেসিবি) ১৩ নম্বর সিজন শুরু হচ্ছে আজ (সোমবার) থেকে। আবারও সঞ্চালকের আসনে অমিতাভ বচ্চন।
প্রতি বছর ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আমজনতা এসে এই শোয়ে নিজের ভাগ্য বদলান। কেসিবির ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত বিজয়ী চম্পারণের সুশীল কুমার। এই গেম শোয়ের পঞ্চম সিজনে পাঁচ কোটি রুপি [বাংলাদেশি প্রায় ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা] জিতে তাক লাগিয়েছিলেন তিনি। সালটা ২০১১।
তবে এই শোয়ে ৫ কোটির মোটা অংক জেতার পর তার জীবনের মুশকিল আসান হয়নি, উল্টো অনেক বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সেই চ্যালেঞ্জের কথাই গত বছর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন সুশীল।
বিপুল পরিমাণ অর্থের নেশায় বুঁদ হয়ে মদ ও সিগারেটের নেশায় ডুবে গিয়েছিলেন সুশীল। তিনি জানান, প্রতারকরা তাকে ঠকিয়ে প্রচুর টাকা হাত করে নেয়। এমনকি নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পর্যন্ত সম্পর্কে চিড় ধরে যায় সুশীলের। তার সাজানো জীবনটাই ছারখার হয়ে যায়।
'আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় শুরু হয় যখন কেবিসি জিতি', এই শিরোনামে ফেসবুকে এক খোলা চিঠি লিখেছিলেন সুশীল।
সেখানে কেবিসির পাঁচ নম্বর সিজনের এই বিজয়ী লিখেন, কেবিসিতে জয় লাভের পর মাসের মধ্যে ১৫ দিন বিহারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হতেন তিনি। যার জেরে তার পড়াশোনা শিকেয় ওঠে। সংবাদমাধ্যম সবসময় তার সাক্ষাৎকার নিতে মশগুল থাকত। তার জীবনে কী ঘটছে সেই নিয়ে বিস্তর উৎসাহ ছিল মিডিয়ার। তাই চটজলদি বেশ কিছু ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিনি, যাতে মিডিয়াতে জানাতে পারেন- কী করেছেন। বেশিরভাগ জায়গায় বিনিয়োগ করা টাকাই ডুবে যায়।
কেবিসিতে পাঁচ কোটি জেতার জেরে সমাজকর্মী হিসাবেও কাজ শুরু করেন সুশীল। প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে হাত থেকে সব টাকা বেরিয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় কোনো মানুষের উপরই ভরসা রাখতে পারছিলেন না তিনি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায়, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত বচসার জেরে তাকে ডিভোর্স দিতে বসেছিলেন।
এরপর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন সুশীল। একটা সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ল্যাপটপে ছবি দেখে কাটিয়ে তিনি ফিল্মমেকার হওয়ার পরিকল্পনাও নেন। আবার আসেন মুম্বাইয়ে। কিছু লোকজন তাকে টেলিভিশন দিয়ে কাজ শুরু করার উপদেশ দেয়। সেই বুদ্ধিমতো একটি চিত্রনাট্য লিখেন সুশীল, যা ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, জানিয়েছেন কেবিসির পঞ্চম সিজনের পাঁচ কোটি টাকার বিজেতা।
তিনি লিখেন, 'নিজেকে খুঁজে পেতে হলে মানুষকে সেটাই করতে হয়, যা তোমার হৃদয় বলে, যদিও নিজের ইগোকে কোনোদিনই সন্তুষ্ট করা যায় না। সফল ও জনপ্রিয় মানুষ হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি দামি।'
জীবনের এই চরম সত্যিটা উপলব্ধি করবার পরেই ২০১৬ সালে মুম্বাই থেকে চম্পারণে ফিরে আসেন সুশীল। মদের নেশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে শিক্ষক হিসাবে শুরু করেন নতুন জীবন। জানা গেছে, এখন নতুন করে স্বপ্ন সাজাচ্ছেন তিনি।