ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র, ক্ষোভের মুখে সরে দাঁড়ালেন প্রযোজক
নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার ওপর নির্মীয়মাণ একটি চলচ্চিত্র নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে ছবিটির প্রযোজক ছবি তৈরির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ফিলিপ্পা ক্যাম্পবেল ছবিটিতে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, এই ছবি যে অনেকের কষ্টের কারণ হতে পারে সেটা তিনি আগে বুঝতে পারেননি।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, সেটি ঘিরেই 'দে আর আস' নামের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রটি আবর্তিত হওয়ার কথা ছিল।
নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলায় ৫১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
ক্যাম্পবেল বলেন, "আমি সম্প্রতি এই ছবি নিয়ে প্রকাশ করা উদ্বেগের কথা এবং মানুষের মতামতের শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছি"।
"মানুষের মনে ১৫ই মার্চ ২০১৯ এর মর্মান্তিক ঐ ঘটনার ক্ষত এখনও শুকায়নি। এই ঘটনা নিয়ে ছবি করার সময় যে এখনও আসেনি সে বিষয়ে আমি একমত। মানুষের মনে আঘাত লাগতে পারে এমন কোন প্রকল্পের সাথে আমি জড়িত থাকতে চাই না," বলেন ক্যাম্পবেল।
তবে তিনি এই ছবির কাজ থেকে সরে দাঁড়ালেও, আমেরিকান এই ছবি তৈরির পুরো প্রকল্পটি যে বাতিল হয়ে যাচ্ছে তা নয়। নিউইয়র্কভিত্তিক ফিল্মনেশন এন্টারটেইনমেন্ট ওই চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক প্রদর্শকের স্বত্ব লাভ করেছে বলে জানা গেছে।
যে ক্ষত শুকায়নি এখনও
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মুখেও যেন একই সুর শোনা গেল। তিনি বলেন, ছবিটি তৈরির সঠিক সময় এখনও আসেনি এবং ছবিটির 'ফোকাস' নির্বাচন ভুল হয়েছে।
স্থানীয় টিভি চ্যানেল টিভিএনজেড কে তিনি বলেন, "আমার ব্যক্তিগত অভিমত , এ ঘটনার এখনও বেশিদিন পেরোয়নি এবং নিউজিল্যান্ডের মানুষের কাছে এর ক্ষত এখনও তাজা। ফলে এই ছবিটি একটু দ্রুতই তৈরী করা হচ্ছে"।
"এই ঘটনার সাথে জড়িত অনেক কাহিনি রয়েছে যা তুলে ধরা যায়। আমি মনে করি না- আমার গল্পটা এখানে মুখ্য"।
ঐ হামলার সময় জেসিন্ডা আরডার্ন যে সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন তা সারা বিশ্বেই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রের প্রস্তাবিত নামটিও নেয়া হয়েছে হামলার ঘটনার পর তার দেয়া একটি ভাষণ থেকে।
নিউজিল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ও ছবিটির মূল চরিত্র হিসাবে জেসিন্ডা আরডার্নকে বেছে নেয়ার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
আয়া আল-উমারি সে হামলায় ভাই হুসেইনকে হারান। তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর কাহিনী 'এখানে বলার মত কোন গল্প নয়'।
ন্যাশনাল ইসলামিক ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই চলচ্চিত্রটির নির্মাণ বাতিল করার জন্য একটি পিটিশনে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
তারা বলছেন, এই চলচ্চিত্রে 'হতাহত ও যারা প্রাণে বেঁচে যান তাদের উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর ভূমিকাকেই মূলত প্রধান বিবেচনা করা হয়েছে'।
এমনকি এই ছবিটি নিয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে কোনরকম পরামর্শও করা হয়নি বলে পিটিশনে উল্লেখ করা হয়।
ক্রাইস্টচার্চ, যেখানে এই হামলা হয়েছিল সেই শহরের মেয়র বলেছেন, এই চলচ্চিত্রের ক্রুদের তার শহরে স্বাগত জানানো হবে না।
নিউজিল্যান্ডের মধ্য-বাম পন্থী প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার চলচ্চিত্র তারকা রোজ বার্নকে। তিনি এই ছবির সাথে যুক্ত থাকবেন নাকি ছেড়ে দেবেন সে বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেন নি।
অস্ট্রেলিয়ার স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টকে এই হামলার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছে। ব্রেন্টন ট্যারান্টকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।
২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের ওপর গুলি চালান ব্রেন্টন ট্যারান্ট। গুলি করার দৃশ্য তিনি মাথায় পরা ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি ফেসবুক লাইভে প্রচার করেন।
আল-নূর মসজিদে হামলা চালানোর পর ট্যারান্ট গাড়ি চালিয়ে লিনউড ইসলামিক সেন্টারে যান এবং সেখানে বাইরে দাঁড়ানো লোকজনের ওপর ও জানালা লক্ষ্য করে গুলি চালান।
ঐ হত্যাযজ্ঞের পর নিউজিল্যান্ডে বন্দুক রাখার আইন সংস্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা, নিউজিল্যান্ডে নিন্দার ঝড়
- সূত্র-বিবিসি