ডেনিয়েল ক্রেইগের সম্পদ দানের সিদ্ধান্ত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জনপ্রিয় ব্রিটিশ অভিনেতা ও জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ চলতি সপ্তাহে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানদের দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নিজের অর্জিত অর্থসম্পদ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ক্রেইগের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। দ্য গার্ডিয়ানের কলাম লেখক রেবেকা নিকোলসনের মতে, ক্রেইগ তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিকোলসনের মতামত এখানে তুলে ধরা হলো-
সমুদ্র স্নাত ড্যানিয়েল ক্রেইগ অনেক তরুণীর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে অর্থনৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে বলা ক্রেইগের কথাগুলোই সবথেকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।
ক্যান্ডিস ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বন্ড তারকা বলেন, "ধনী হিসেবে মৃত্যুবরণ করলে আপনি ব্যর্থ, এরকম একটি পুরোনো প্রবাদের কথা জানেন? আমি আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মোটা অঙ্কের সম্পদ রেখে যেতে যাই না।"
মৃত্যুর আগে নিজের ধনম্পদ থেকে মুক্তি চান বলে মন্তব্য করেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ। মজার বিষয় হলো, এই সাক্ষাৎকারের এক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি'র করা হলিউডের শীর্ষ আয়ের তারকাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ড্যানিয়েল ক্রেইগের নাম।
'নাইভস আউট' চলচ্চিত্রের দুই সিক্যুয়েল থেকে ক্রেইগের আয় ১০০ মিলিয়ন ডলার বলে জানা গেছে। ফলে, ক্রেইগের দান করার মতো সম্পত্তিও যে কম হবে না, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়।
অবশ্যই, 'মোটা অঙ্কের' বক্তব্যটি আপেক্ষিক। তাছাড়া, আমি নিশ্চিত যে ক্রেইগের সন্তানদের এমন দুরবস্থা হবে না যে, ইলেকট্রিক মিটারের টাকা ভরতে তাদের তন্নতন্ন করে বাড়ি খুঁজে পয়সা বের করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ধনী বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের সন্তানদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখতে পারেন। বিনাশ্রমে বিপুল সম্পদের অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হওয়া ক্রেইগের সন্তানদের জন্য খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হয় না।
আমি কমেডি সিরিজ সাকসেশন দেখেছি। সেখানে বিপুল অর্থের মালিন লোগান রয়ের সম্পত্তি নিয়ে সন্তানদের বোকার মতো উদ্ভট কাজ করতে দেখা যায়। বাস্তব জীবনেও যে এরকম দেখা যায় তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
কোটি কোটি টাকার অর্থ নিয়ে মানুষের বিড়ম্বনা সচরাচর দেখা না গেলেও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে দিন দিন সমস্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে আমি বাসাবাড়ির দাম বাড়তে দেখছি। আগের প্রজন্ম নিজ উপার্জনের অর্থে সহজে বাড়ি কিনতে পারলেও এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
আমি আমার বন্ধুদের মধ্যেই এই বিষয়টা দেখেছি। যারা পারিবারিক ভাবে অর্থসম্পদ পেয়ে থাকেন, তারা সহজেই নতুন বাড়ি-জমিজমা কিনে ফেলতে পারছেন। অন্যদিকে, যারা পারিবারিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত হন, তাদের নিজস্ব বলতে তেমন কিছু থাকে না। ফলে, তাদের মধ্যে এক ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই বৈষম্য সম্ভবত আরও প্রকট হবে।
ক্রেইগ নিশ্চয়ই পুরোপুরি সন্তানদের উত্তরাধিকার বঞ্চিত করার কথা ভাবছেন না। তার সম্পদের পরিমাণ আমাদের কল্পনাতীত। আপনি যে সংখ্যাগুলো দেখেন তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সম্ভবত আরও অনেক বেশি অর্থ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে।
নিজের সম্পত্তি আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টি ড্যানিয়েল ক্রেইগ অরুচিকর বলে মনে করেন। আমার ধারণা, তিনি তার সম্পদ নিয়ে আরও সুন্দর কোনো পরিকল্পনা করছেন।
জেফ বেজোসের মতো মহাকাশে চক্কর দিতে নিজের জন্য বিশাল রকেট না বানিয়ে হয়তো তিনি গায়িকা ডলি পারটনের মতো বাচ্চাদের লাখ লাখ বই দান করবেন কিংবা কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সম্পদ দিয়ে যাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
- লেখিকা রেবেকা নিকোলসন একজন অবজার্ভার কলামিস্ট।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান