৯১ বছর পর ‘রাইট ব্রাদার্স’-এর বিমান ফেরত চাইলেন মূল মালিকের সন্তানেরা
ফিলাডেলফিয়ার বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর দ্য ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, ১৯১১ সালে রাইট ব্রাদার্সের তৈরি একটি বিমান গ্রোভার সি. বার্গডল নামে এক ব্যক্তি তাদের উপহার হিসেবে দেন। বিমানটি এ জাদুঘরের মূল্যবান সংগ্রহগুলোর মধ্যে একটি।
রাইট মডেল বি নামের এই দুই আসনের বিমানটি রাইট ভাইদের কাছ থেকে কিনেছিলেন বার্গডল। এটি প্রাথমিক উড়োজাহাজগুলোর সংরক্ষিত অন্যতম সংস্করণগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। জাদুঘরের ওয়েবসাইটে বিমানটির সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং উদ্ভাবনী ফ্ল্যাপ ও তারের সাহায্যে এর নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিবরণ তুলে ধরা আছে।
তবে বিমানটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকলেও এর দাতা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। গ্রোভার সি. বার্গডল একজন ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তিনি মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। যুদ্ধের আগে ফিলাডেলফিয়ার ব্রিউইং সাম্রাজ্যের এ বংশধর আগে গাড়ি চালাতেন এবং বিমান উড়াতেন। তবে তিনি এতোটা উদাসীন ছিলেন যে তাকে সেসময় 'প্লেবয় অফ দ্য ইস্টার্ন সিবোর্ড' খেতাব দেওয়া হয়।
প্রায় এক শতাব্দী ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটে বিমানটি দর্শনার্থীদের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি বিমানটি কীভাবে এখানে পৌঁছালো, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
১৯৩৩ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের সংগ্রহে আসে বিমানটি। কিন্তু সেসময় জার্মানিতে পালিয়ে ছিলেন বার্গডল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি সামরিক বাহিনী থেকে পালিয়ে গেছেন। এই সময়ে, তার সব সম্পত্তি মার্কিন সরকারের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে জাদুঘর একাধিক অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছে, বার্গডল বিদেশে মার্কিন কর্তৃপক্ষ থেকে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে বিমানের মালিকানা তাদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি বার্গডল ও তার পরিবারকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ের লেখকের কাছে জাদুঘরটি স্বীকার করেছে যে, তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো চিঠি নেই। এর পরিবর্তে, এক জাদুঘর কর্মকর্তা বলেছেন, বার্গডল শুধু মৌখিকভাবে এক জাদুঘর কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি বিমানের মালিকানা জাদুঘরকে দিতে চান।
জাদুঘরের কিউরেটর সুজান্না ক্যারল এ বিষয়ে লেখক টিমোথি ডাব্লিউ. লেককে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে সুজান্না লিখেছেন, "বার্গডল ও তার পরিবার সম্পর্কে আপনি যদি জেনে থাকেন, তাহলে বুঝা উচিত কেন সেসময় বার্গডল বা জাদুঘর কোনো লিখিত দলিল চাননি। বার্গডল তখনও পালিয়ে ছিলেন ও তার সম্পত্তি তৎকালীন সরকার জব্দ করেছিল ও তা অব্যাহত ছিল।"
কিন্তু সম্প্রতি বার্গডলের পরিবার জাদুঘরের বিবরণ চ্যালেঞ্জ করেছে। এক সাক্ষাৎকারে বার্গডলের মেয়ে ক্যাথারিনা ইনস্টিটিউটের ব্যাখ্যাকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, সরকার তার বাবার সব সম্পত্তি এক দশকেরও বেশি সময় আগে জব্দ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, "আমার বাবা যখন জার্মানিতে পলাতক ছিলেন তখন কীভাবে তাদের সঙ্গে তিনি মৌখিক চুক্তি করেছেন? এটা কি সম্ভব ছিল? দ্বিতীয়ত, এটি কৌশলগত ভাবেই সরকারের দখলে থাকার কথা। কারণ আইনগতভাবে আমার এটি হস্তান্তর করতে পারতেন না।"
বার্গডলের পরিবারের সদস্যরা এখন জাদুঘরের কাছে বিমানটি ফেরত চাইছেন কিংবা বিমানের বিনিময়ে অন্যকোনোভাবে ক্ষতিপূরণ সম্ভব কিনা তার অনুরোধ জানিয়েছেন। ক্যাথারিনা বার্গডল এ বিষয়ে বলেন, "তিনি চাচ্ছেন জাদুঘর এ বিমানটি কীভাবে পেয়েছেন সেসম্পর্কে জানাবে।"
এক বিবৃতিতে বিমানটি অধিগ্রহণের বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু না বললেও জাদুঘর পুনরায় জানিয়েছে, তারা এটি উপহার পেয়েছেন। তবে পাশাপাশি তারা বার্গডলের পরিবারের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
জাদুঘরের বিবৃতিতে বলা হয়, বিমানটি উপহার দেওয়ার পর ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বার্গডল নিজে বা ১৯৬৬ সালে তার মৃত্যুর পর তার মা এমা, স্ত্রী বার্তা কেউই কখনো বিমানটি ফেরত চাননি বা উপহারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেননি।"
এসময় ইনস্টিটিউট ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত এক সংবাদের প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাইট ব্রাদার্সের বিমানটি বার্গডলের কাছ থেকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। জাদুঘরের বিবৃতিতে এ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সরকার বার্গডলের সম্পত্তি জব্দ করেছে। কিন্তু কখনোই বিমানটি জব্দ করার চেষ্টা করেনি। যার অর্থ বার্গডলের উপহার আইনত বৈধ ছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "বার্গডলের সম্মানের আমরা অব্যাহতভাবে রাইট ব্রাদার্স ও তার গল্প দর্শনার্থীদের কাছে প্রকাশ করে যাবো যেমনটি তিনি চেয়েছেন।"
বার্গডলের পরিবার জাদুঘরের দাবিকে ন্যায্য মনে করলেও, তারা মনে করেন জাদুঘর সমালোচিত এবং নিন্দিত হওয়া বার্গডলের সম্মান পুনরুদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তবে তারা এটিও শিকার করেন যে বার্গডল তার আচরণের জন্য যথোপযুক্ত শাস্তি ভোগ করেছেন। সেসময় বার্গডলের মতো এমন আরও অনেক 'দায়িত্বজ্ঞানহীন বা স্ল্যাকার' ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বার্গডলের আর্থিক সচ্ছলতা, বিখ্যাত পরিচিতি এবং নিয়ম ভাঙার প্রবণতা তাকে অন্যদের তুলনায় আরও বেশি সমালোচিত করেছিল। বিশেষত, তার অবস্থান ও আচরণ সমাজের চোখে তাকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছিল।
১৯১৭ সালে বার্গডল সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সেসময়ই ওরভিল রাইটের কাছ থেকে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নেন বার্গডল। তখনই পাঁচ হাজার ডলারে বিমানটি কিনেছিলেন বার্গডল। পরবর্তীতে সেই বিমান নিয়ে ভবনের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ও বিভিন্ন কসরত দেখানো তখন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।
এছাড়া কিশোর বয়সে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, একাধিক দুর্ঘটনা ও ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে তৎকালীন স্থানীয় গণমাধ্যম তাকে 'স্পিড ফিন্ড' উপাধি দিয়েছিল। ১৯১৩ সালে এক দুর্ঘটনার পর তিনি দুই মাস কারাভোগও করেছিলেন।
তিনি যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ না দিয়ে গা ঢাকা দিলেন তখন তার খোঁজে ছবি সম্বলিত 'ওয়ান্টেড' পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয় পুরো দেশ।
তাছাড়া বার্গডলের পরিবর্তে যে ব্যক্তিকে যুদ্ধে নেওয়া হয়, ফ্রান্সের একটি বনে যুদ্ধে ওই ব্যক্তি মারা গেলে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'বার্গডলের জায়াগায় একজন বীরের মৃত্যু হয়েছে'।
১৯২০ সালে বার্গডল ধরা পড়েন। সারাদেশে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর তাকে তার ফিলাডেলফিয়ার প্রাসাদের ধূসর রঙের জানালার সিটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। তিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহ জেলে ছিলেন। এর মধ্যেই জেল থেকে পালিয়ে গিয়ে পুরো জাতিকে অবাক করে দেন তিনি।
বার্গডল প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করাতের বাধ্য করেন যে, তাকে সাময়িক মুক্তি দিলে তিনি মাটিতে পুঁতে রাখা একটি সোনার পাত্র খুঁজে দিতে পারবেন। এরপর দুজন মার্কিন সৈনিককে নিয়ে তিনি বার্লেস্ক থিয়েটারে যান এবং পরে বাড়িতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।
বার্গডলের মা তাদের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। পাহারাদার দুজন সৈনিক বিলিয়ার্ড খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লে, এ সুযোগে পালিয়ে যান বার্গডল। তিনি তার ড্রাইভারকে সঙ্গে নিয়ে কানাডা হয়ে তার দাদা-দাদির জন্মভূমি জার্মানিতে পালিয়ে যান।
বার্গডল প্রথমে জার্মানির এবারবাখে তার এক কাজিনের হোটেলে থাকতে শুরু করেন। পরে জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ভাইন্সবার্গে তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হলে সেখানে চলে যান। তবে তিনি প্রায়ই গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে আসতেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ায় জাতীয় ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। তাকে মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিতে দেখা গেছে এমন শিরোনামে বহু গণমাধ্যমে খবর হয়েছেন।
১৯২১ সালে ফেডারেল 'ট্রেডিং উইথ দ্য এনিমি অ্যাক্ট'-এর অধীনে প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি. হার্ডিংয়ের ব্যক্তিগত নির্দেশে বার্গডলের সম্পত্তি জব্দ করা হয়। জার্মানিতে বার্গডলকে দুবার অপহরণের চেষ্টাও করা হয়। ১৯২৩ সালে প্রথম অপহরণের সময় এক ব্যক্তির আঙুল কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেন বার্গডল। দ্বিতীয় বারে আরেকজনকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।
১৯৩৩ সালে রাইট ব্রাদার্সের বিমানটি বার্গডলের ভাইয়ের খামার বাড়িতে একটি ভবনে জরাজীর্ণ অবস্থায় রাখা ছিল। বিমানটির বয়স তখন দুই দশকেরও বেশি।
বার্গডল ও তার পরিবারকে নিয়ে লেখা বইয়ের লেখক টিমোথি ডাব্লিউ. লেক জানান, ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরেই এক জাদুঘরের সেচ্ছাসেবক উইলিয়াম এইচ. শিহান ও জাদুঘরটির সহকারী পরিচালক সি. টাইনসেন্ড লুডিংটন বিমানটি সংস্কারের জন্য নিয়ে যান। উইলিয়াম একটি স্থানীয় ফ্লাইং ক্লাবের কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনি বার্গডলের সঙ্গে বিমানও ওড়াতেন।
১৯৩৫ সালের মধ্যে বিমানটি ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের নতুন বো-আর্ট ভবনে, বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন পার্কওয়েতে স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞান চর্চার প্রতি বেনঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের আগ্রহ থেকেই এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিমানটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য শুধু বিমানই নয়, বিমানের সঙ্গে জড়িত সব ধরণের যন্ত্রাংশ ও পদার্থবিদ্যার নীতিগুলোও দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শন করা হয়।
তবে বিমানটি কীভাবে জাদুঘরে আনা হয় তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন নথির মধ্যে 'স্পেসিফিকেশনস' শিরোনামে ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের টাইপ করা একটি নথি পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, উইলিয়াম এইচ. শিহানকে বার্গডল একটি চিঠির মাধ্যমে বিমানটি ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটকে 'উপহার' হিসেবে দিয়ে যান।
১৯৮১ সালে জাদুঘরের প্রদর্শনী পরিচালক ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট প্রেসের জন্য একটি বই 'এভিয়েশন অ্যান্ড পেনসিলভানিয়া'-এর সহলেখক ছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, "কয়েকটি চিঠি বিনিময়ের পর, জার্মানিতে নির্বাসনে থাকা বার্গডল ঐতিহাসিক বিমানটি ইনস্টিটিউটে প্রদর্শনের জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে যান।"
২০১৯ সালে 'দ্য বার্গডল বয়েজ' বইয়ের লেখক টিমোথি ডব্লিউ. লেককে একটি ই-মেইল করেন ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের কিউরেটর সুজান্না ক্যারল। তিনি সেই ইমেইলে লেখেন, "উইলিয়াম এইচ. শিহান (পেনসিলভানিয়া অ্যারো ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ) ও লুডিংটনের সঙ্গে বার্গডলের বেশ কয়েকটি চিঠি চালাচালি হয়েছিল। জার্মানিতে নির্বাসিত থাকা অবস্থায়ই বার্গডল সেই ঐতিহাসিক বিমানটি ইনস্টিটিউটকে প্রদর্শনের জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে যান।"
তবে পরে এক জবাবে, ক্যারল জানান যে তিনি এমন কোন চিঠি খুঁজে পাননি এবং তিনি সন্দেহ করতে শুরু করেছেন যে এমন চিঠি আদৌ ছিল কিনা। তবুও তিনি বলেন বিমানটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল এ ব্যাপারে পরিস্থিতিগত বিপুল প্রমাণ রয়েছে।
এর উদাহরণ হিসেবে ক্যারল উল্লেখ করেছেন, ১৯৪৩ সালে বার্গডলের স্ত্রী ওরভিল রাইটকে লেখা একটি চিঠিতে বিমানটি স্থানান্তরের বিষয়ে লিখেছিলেন। সেখানে বিমানটিকে 'রাইট বি' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন এটি তার স্বামীর নিজের ছিল।
এছাড়া জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছে, ১৯৩৮ সালে বড় ছেলে আলফ্রেডকে নিয়ে জাদুঘরে এসেছিলেন বার্টা বার্গডল। সেখানে আলফ্রেড মডেল বি-এর ভেতরে বসে আছেন কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
তবে লেক ও বার্গডল পরিবার বলেন, "বার্গডল ও তার আত্মীয়রা কখনো এ নিয়ে গোলমাল করেননি। কারণ তারা মনে করতেন বিমানটি উপহার দেওয়ার বিষয়ে জাদুঘরের বিবরণ সত্য। তাছাড়া ১৯৩৯ সালে আমেরিকায় ফিরে এসে পুরানো বিমান পুনরুদ্ধারের বিষয়ে গ্রোভার বার্গডলের কোনো আগ্রহ ছিল না।"
যদিও সেসময় জাদুঘরের সংগ্রহ পদ্ধতি এলোমেলো হতে পারে। তারপরও ফিলাডেলফিয়ার সাবেক টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপক লেক মনে করেন, "ফ্র্যাঙ্কলিনের মতো সম্মানজনক একটি প্রতিষ্ঠান শুধু একজন দাতার কথার ওপর নির্ভর করে বিমানটি গ্রহণ করেছিল, এটি তার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়।" তিনি বলেন, "১৯৩০-এর দশকে হলেও, এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কীভাবে বিমানের মালিকের কাছ থেকে কোনো লিখিত নথি ছাড়াই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিমানটি গ্রহণ করতে পারে, তা বোঝা কঠিন।"
বার্গডল দেশে ফিরে আসলে তার স্ত্রী ও সন্তানরাও জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বার্গডল নিজের ইচ্ছাতেই ফিরে এসেছিলেন। কারণ তার অর্থ ফুরিয়ে এসেছিল এবং তিনি নস্টালজিয়াতেও ভুগছিলেন। তাছাড়া নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতেও তিনি দেশে চলে আসেন। মোটা গড়নের, কালো গোঁফ এবং জার্মান একসেন্টে কথা বলা বার্গডলকে নিউইয়র্কের বন্দরে এস.এস. ব্রেমেন জাহাজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে তাকে কানসাসের ফোর্ট লেভেনওয়ার্থে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চার বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন বার্গডল।
শেষ পর্যন্ত, ১৯২১ সালে সরকারের জব্দ করা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারের সম্পত্তির ৮০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন বার্গডল। ১৯৪৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি তার পরিবারকে নিয়ে ভার্জিনিয়ায় চলে যান। তবে তার স্বজনরা জানান, সেসময় বার্গডল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে তার বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত সহকারীকে আক্রমণ করার অভিযোগে ওঠে। ১৯৬০ সালে বার্গডল এবং বার্টার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১৯৬৬ সালে ৭২ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একটি মানসিক হাসপাতালে মারা যান বার্গডল।
তার মেয়ে ক্যাথরিনা জানান, "২০০৩ সালে তার আত্মীয় লুইসের সঙ্গে মডেল বি বিমানটির সংস্কার কাজের সময় জাদুঘরে গিয়েছিলেন।"
তিনি বলেন, "সে সময় বিমানটি সেখানে কীভাবে এসেছে তা নিয়ে কখনো ভাবেননি। এটি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু পরে লেকের গবেষণার ফলে আমার আগ্রহ জন্মে এবং আমি সন্দেহ করতে শুরু করি।"
গ্রোভার বার্গডলের নাতনি লেসলি গ্যাম্বল এ বিষয়ে বলেন, "পরিবারটি বিমানটির ব্যাপারে খুব বেশি খোঁজ নেয়নি। একজন নাতনীর হিসাবে, যখন তারা বলেছিল যে বিমানটি ফ্র্যাঙ্কলিনে আছে, তখন আমি জিজ্ঞাসা করিনি কীভাবে এটি সেখানে এসেছে। তাছাড়া আমার দাদা তখন পালিয়ে ছিলেন, সে পরিস্থিতিতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করাও কঠিন চিল।"
শেষ সময়ে বার্গডলকে নিয়ে কম কথা হলেও সেসময়গুলো ছিল আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন। তার পরিবার তাকে একজন মদ্যপ, প্যারানয়েড বিভ্রমগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সে তার সন্তানদের বিষ প্রয়োগ করতে মারতে চেয়েছেন।
ক্যাথরিন এ বিষয়ে বলেন, "শৈশবে দেখতাম তিনি তার অতীত নিয়েই পড়ে থাকতেন। আমি মনে করি না, বিমানটি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে তার কোনো চিন্তাই ছিল না।"
অনুবাদ: সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ