৪ মে থেকে বিটিভিতে আবারও ‘এইসব দিন রাত্রি’
শফিকদের (বুলবুল আহমেদ) বাসায় নতুন একটা ম্যাজিক দেখাতে এসেছেন আনিস (খালেদ খান)। দরজায় নক করেই পেয়ে গেলেন শাহানাকে (শিল্পী সরকার অপু)। শাহানা শফিকের বোন। আনিসের দর্শক হিসেবে শুধু শাহানা হলেই চলে।
পুরোদস্তুর ব্যাচেলর আনিস থাকে শাহানাদের ওপরের তলায়। ম্যাজিক দেখাতে এসে রুমাল আনেনি আনিস। শাহানার কাছে রুমাল চায়। শাহানা বিরক্ত মুখে জানায় রুমাল নেই। কিন্তু অভিব্যক্তিতে বোঝা যায় সে ম্যাজিক নয় ম্যাজিশিয়ানকে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়াল করছেন। ততক্ষণে পকেট থেকে রুমাল বের করে আনিস। ম্যাজিক শুরু করে।
শেষ দিকে আসতেই দৃশ্যে ঢোকেন শাহানার মা (দিলারা জামান)। আনিসকে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণ নেই, তাই মেজাজ দেখান। তার কথার মারপ্যাঁচে ধরা খেয়ে যায় আনিস। বলে, সে পানি খেতে এসেছে? মা জানতে চান, তার বাসায় কি পানি নেই? পানি থাকলেও গ্লাস নেই। উত্তর দেয় আনিস।
মা নিজের হাতে টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে আনিসকে কে দেয়। আনিস পানি খায়। খাওয়া শেষে বিদায় নেয়। মা বলেন, গ্লাসটাও নিয়ে যেতে। আনিস চলে যায়। টেবিলে পড়ে থাকে আনিসের ম্যাজিক দেখানো রুমাল। রুমালের মধ্যে একটা লাল গোলাপ। মা চলে গেলে সেই রুমাল হাতে নিয়ে ফুল থেকে গন্ধ নেয় শাহানা। নাকি আনিসের ভালোবাসার অনুভূতি নেয়!
এরকম দৃশ্যর একটা পারিবারিক আবহের নাটক 'এইসব দিনরাত্রি'। নাটকটি রচনা করেছেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এ প্রচারিত হতো এই ধারাবাহিকটি। আবার নতুন করে প্রচার শুরু হচ্ছে এটির। আগামীকাল (৪ মে থেকে) দেখানো হবে এইসব দিনরাত্রি।
বিটিভি ও উইকিপিডিয়া সুত্রে জানা যায়, নাটকটা সেই সময় এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে নাটক চলাকালীন সময়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে যেত। নাটকটি ঢাকা শহরে বসবাসকারী একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প বলেছে। নাটকটিতে একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ, ভালোবাসা, বিয়ে, মৃত্যু,
সমস্যা ইত্যাদিই দেখানো হয়েছে। গল্পটা শেষ হয় "টুনি" নামের লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত এক ছোট মেয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ছোট মেয়েটির মৃত্যু পুরো দেশে একটা আলোড়ন তোলে। অনেকেই হুমায়ূন আহমেদকে "টুনি" চরিত্রটিকে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার
সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
নাটকটির নিয়ে গতকাল কথা হয় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী দিলারা জামানের সঙ্গে। শুরুতেই জানতে চাই, ওই তরুণ বয়সে কেন তিনি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করলেন? অকপটে জানালেন হুমায়ূন আহমেদ চেয়েছিলেন বলেই তিনি বুলবুল আহমেদ ও আসাদুজ্জামান নূরের মা হয়েছিলেন।
সেই স্মৃতি মনে করে বলেন,'আমি তখন বিএফ শাহিন স্কুলে শিক্ষকতা করি। থাকি ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে। একই জায়গায় আরেক অভিনেত্রী ডলি জহুরও থাকেন। এই নাটকে ডলি জহুর আমার ছেলে শফিকের বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে। শুটিং এবং রির্হাসেলে আমরা দুজন একসঙ্গে রিকশায় বিটিভিতে যেতাম। আবার একসঙ্গে ফিরতাম। শুটিংয়ের আগে কমপক্ষে তিন-থেকে চারদিন আমাদের রিহার্সেল হতো।'
তিনি জানান, নাটকের রিহার্সেল ও শুটিং এ হাজির থাকতেন হুমায়ূন আহমেদ। সংলাপের বেলায় কোনো ছাড় দিতেন না। কোনো শব্দ এদিক সেদিক করার উপায় ছিল না। তবে সবাই বেশ উপভোগ করতেন শুটিংটা।
বুলবুল আহমেদ তার ছেলের চরিত্রে? বিষয়টা মনে করিয়ে দিতেই দিলারা জামান হাসতে হাসতে বলেন, 'এটা নিয়ে আমরা খুব হাসাহাসি করতাম। পরে অন্য নাটকে বুলবুল ভাইয়ের সাথে অভিনয় করতে গিয়ে যখন বলতাম আমি কিন্তু আপনার মা। তখন বুলবুল ভাই লজ্জায় লাল হয়ে যেতেন। আমরা খুব দুষ্টমি করতাম তার সঙ্গে।'
নাটকটি প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল বলেন জানান দিলারা জামানও। বলেন, 'নাটকে আমার মেয়ে শাহানা (শিল্পী সরকার অপু) স্লিপিং পিল খেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করে। নাটকটা চলাকালীন সময়ে আমার এক প্রতিবেশীর মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করে একই কাজ করে। ওই দিন আমি দেখতে যাই। তখন ওই শিক্ষার্থীর মা আমাকে দেখে ধমকে ওঠেন। বলেন, নাটকে আরও বেশি করে এসব দেখান। অবশ্য এক
সপ্তাহ পরে সেই মা আমার বাসায় এসে সরি বলে যান। এই ঘটনাটা আমার মনে দাগ কেটে আছে। কারণ মেয়েটি স্লিপিং পিল খেয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছিল।'
কথা হয় নাটকে শাহানা চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পী সরকার অপুর সঙ্গেও। তিনি বলেন, 'এটা আমার জীবনের অন্যতম একটা সেরা কাজ। পুরো নাটকটার শুটিং হয়েছে বিটিভিতে। আমরা খুব আনন্দ নিয়ে কাজটা করেছি।'
নাটকটি বর্তমানে বিটিভির প্রযোজক মাহফুজা ফেরদৌস তত্বাবধানে প্রচারিত হচ্ছে। তিনি জানান, এই নাটকে অভিনয় অভিনয় করা অনেকশিল্পী মারা গেছেন। অনেকেই জীবিত আছেন। নাটকটির আবেদন এতটুকু কমেনি। তাই কোয়ারেন্টাইনের সময়ে এটি প্রচার করা হচ্ছে।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ (শফিক ), খালেদ খান (আনিস), নায়ার সুলতানা লোপা (টুনি), কাজী মেহফুজুল হক (বাবা), আবুল খায়ের (মামা), শিল্পী সরকার অপু (শাহানা), ইনামুল হক (মি করিম), ডলি জহুর (নীলু), লুৎফুন নাহার লতা (শারমিন) , আসাদুজ্জামান নূর (রফিক) , দিলারা জামান(মা) ও মাসুদ আলী খান (অফিসের কর্মকর্তা)।