‘বাদামের খোসা’য় আইয়ুব বাচ্চু
নব্বইয়ের দশক। ছাপানো পত্রিকার স্বর্ণযুগ চলছে বাংলাদেশে। তিন বন্ধু স্বরূপ সোহান, ওমর শরীফ আর সুমন পাটওয়ারী প্রদায়ক (কন্ট্রিবিউটর) হিসেবে কাজ করছেন দৈনিক ভোরের কাগজে।
পত্রিকার পাতায় নাম ছাপানো, সাথে কিছু উপার্জন; এই আশায় তারা তিনজন ভোরের কাগজের অফিসে ঘোরাফেরা করেন নতুন কোন অ্যাসাইনমেন্টের অপেক্ষায়।
একই পত্রিকায় তখন কাজ করছেন ‘দলছুট’ খ্যাত সঞ্জীব চৌধুরী, সাহিত্যিক আনিসুল হক, দুই বাংলার নায়িকা জয়া আহসান সহ আরও অনেক চেনা মুখ। তাঁদের সান্নিধ্যে স্বরূপ, ওমর আর সুমনের দিন ভালোই যাচ্ছিল।
বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু'র সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তিনজনের। সাক্ষাৎকার কিংবা ফিচার লেখার প্রয়োজনে তিনজন হানা দিতেন বাচ্চু'র কনসার্ট কিংবা প্র্যাকটিস প্যাডে।
এবার সাংবাদিকতার স্মৃতি নিয়ে বই লিখেছেন এই তিন বন্ধু। ‘বাদামের খোসা’ নামের বইটি এ বছরই বেরিয়েছে একুশে বইমেলায়, বর্ষাদুপুর প্রকাশনী থেকে।
স্মৃতিকথার মোড়কে লেখকত্রয়ী ধরতে চেয়েছেন নব্বইয়ের দশক, আউয়ুব বাচ্চু ও আরো অনেক মহারথীকে।
ছোট অথচ আবেগী কয়েকটি অধ্যায়ে আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁর ভক্ত- সাংবাদিক স্বরূপ, ওমর আর সুমন।
স্বরূপ সোহান প্রিয় “এবি” কে নিয়ে লিখেছেন-
“সুযোগটা যে এভাবে আসবে বুঝিনি। পাশের বাসা বলে দাওয়াত পেলাম আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের শ্যালকের বিয়েতে। চরম উত্তেজনা নিয়ে গেলাম বিয়ে খেতে আমার বাবার সঙ্গে আমরা দুই ভাই। আমার উত্তেজনার আর তর সইছে না আইয়ুব বাচ্চুকে কাছ থেকে দেখবো বলে। আমি আর আমার ছোট ভাই বসেছি বাবার পাশে। একেবারেই আচমকা আমার বাবা একটা কাজ করে বসলেন। বাচ্চু ভাই আমাদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে আমার বাবা অনেকটাই তাঁর পথ আগলে দাঁড়ালেন। কুশল বিনিময় করে আমাদের দুই ভাইকে দেখিয়ে বলে বসলেন, “ এই যে দেখেন আমার দুই ছেলে, সারা দিন রাত আপনার গান শোনে, আর আমার সঙ্গে তর্ক করে আপনি নাকি মান্না দে, হেমন্তের চাইতেও ভাল গান করেন। আমরা তো পুরান দিনের মানুষ, এদের গানই শুনি। আচ্ছা ওদের আপনিই বলে দেন কে ভাল গায়ক? আপনি না মান্না দে? আমার বাবার এই অদ্ভুত প্রশ্নে চরম বিব্রত হলাম আমি আর আমার ভাই। বাচ্চু ভাইয়ের সাথে প্রথম পরিচয়ে আমার মনে হচ্ছিল আমি মাটির সঙ্গে মিশে যাই। আমাদের বাঁচালেন বাচ্চু ভাই। কাছে এসে আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে জিভ কেটে বললেন, “কী বল তোমরা? মান্নাদে হেমন্তর মতো শিল্পীদের সাথে আমার তুলনা? আমি তো উনাদের কাছে কিছুই না। আমার জন্যে এটা বেয়াদবি। তোমরা আমার গান শোনো অবশ্যই ভালো কিন্তু উনাদের অবশ্যই সম্মান করবে। এই হলো আমার সঙ্গে বাচ্চু ভাইয়ের পরিচয়ের শুরু।”
এমন অনেক মজার স্মৃতি নতুন প্রাণ পেয়েছে ‘বাদামের খোসা’র দুই মলাটের ভেতরে। শুধু আইয়ুব বাচ্চু নয়, আরো অনেক তারকা শিল্পীদের অজানা গল্প জানা যাবে বইটির পাতায় পাতায়।