‘রে’ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত সৃজিত
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/06/26/srijit-mukherji-750x375.jpeg)
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় স্তরে একের পর এক সাফল্যের মুখ দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবি। বলা যায়, সত্যজিত পরবর্তী যুগে বাংলা ছবির দশা ও দিশা যারা পালটে ফেলেছেন সেই পরিচালকদের তালিকায় অন্যতম সৃজিত। ২০১০ সালে 'অটোগ্রাফ'র সঙ্গে পরিচালক হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন সৃজিত, সেই ছবি ছিল সত্যজিতের তৈরি 'নায়ক' ছবিকে দেওয়া 'ট্রিবিউট'। অগ্রজ পরিচালকের চলচ্চিত্র ভাবনা সৃজিতের চলার পথের পাথেয় তা বহুবার জানিয়েছেন তিনি।
গত বছরই সত্যজিতের ফেলুদা কাহিনি নিয়ে 'ফেলুদা ফেরত' ওয়েব সিরিজ তৈরি করেছিলেন সৃজিত। তবে প্রথমবার অন্য ভাষায় সত্যজিতের কাহিনিকে পর্দায় রূপ দিলেন 'ভিঞ্চি দা' পরিচালক। শুক্রবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল 'রে' (Ray)। 'সত্যজিৎ রায়ের দূরদর্শীতায় বাঁধা, প্রেম, লালসা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং সত্যের চার গল্প' এই সিরিজ।
অভিষেক চৌবে, ভাসান বালা এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বর্তমান প্রজন্মের তিন নামী পরিচালক নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন সত্যজিতের কাহিনিকে।
সত্যজিতের চার ছোট গল্প নিয়ে তৈরি এই অ্যান্থলজি সিরিজে 'ফরগেট মি নট' এবং 'বহুরূপীয়া' পরিচালনা করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। 'ফরগেট মি নট'-এ মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন আলি ফজল ও শ্বেতা বসু প্রসাদ। অন্যদিকে 'বহুরূপী' লিড রোলে দেখা মিলেছে কে কে মেনন এবং বাঙালি অভিনেত্রী বিদিতা বাগের।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/06/26/st_1624611906233.jpg)
সত্যজিত রায়ের মতো মহান চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক, চিত্রনাট্যকারের ছোটগল্প নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করা মানেই সমালোচনার ঝড় উঠবে, আর সমালোচনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত সৃজিতও। অভিষেক চৌবে বা ভাসান বালার তুলনায় সমালোচকদের আতস কাঁচের লেন্সের নীচে অনেক বেশি করে পড়তে হবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে তা ভালোভাবেই জানেন এই বাঙালি পরিচালক।
এই প্রসঙ্গে তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, "আমি রুচিবাগীশ (পিউরিস্ট) ব্যক্তিদের থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই আশা করছি, অন্যদিকে সত্যজিত রায়ের সঙ্গে যাদের সরাসরি যোগ নেই কিংবা থাকলেও যাদের চিন্তাভাবনা মুক্ত, তারা হয়ত বিষয়টি সাদরে গ্রহণ করবেন। সেই সকল দর্শক যারা সত্যজিত রায় সম্পর্কে গভীরে জানেন না, অথবা সঠিকভাবে বললে সত্যজিত-প্রেমী নন, তারা হয়ত চারটে গল্পই খুব দারুণভাবে উপভোগ করবেন। কিন্তু যারা কিংবদন্তির কাজ নিয়ে কাঁটাছেড়া পছন্দ করেন না, তাদের জন্য এটা একটু শক্ত কাজ হবে। বিশেষত বাঙালি দর্শকদের ক্ষেত্রে, কারণ সত্যজিত বাঙালির আবেগ, অনেকের কাজে উনি পূজনীয়। তাই তার ভাবনাকে নিজের মতো করে পেশ করলে আপনি মুশকিলে পড়তে পারেন। তাই ফেলুদা ফেরত দেখে যারা খুশি হয়েছিল তারাই হয়ত 'রে' দেখে আমায় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেবে"।
মুচকি হেসে সৃজিতের দাবি, "অভিষেক চৌবে বা ভাসান বালা এই মামলায় সেফ সাইডে আছেন, ওনারা বাংলার মানুষ নন তো, হয়তো অতোটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না"।
সৃজিত আরও বলেন, এই অগ্নিপরীক্ষা তার কাছে নতুন নয়। সেই অটোগ্রাফের সময় থেকেই সম্মুখীন হয়েছেন একের পর এক প্রশ্নের।
"আমার প্রথম ছবি অটোগ্রাফ ছিল সত্যজিত রায়ের 'নায়ক' ছবিকে দেওয়া ট্রিবিউট। এই ছবিতে উত্তম কুমার, সত্যজিত দুজনকেই আমি শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছিলাম, বেশকিছু মানুষ রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিল সেইসময়। আমাকে তুলোধনা করা হয়, এমনকি ভুডু পুতুল পর্যন্ত বানানো হয়েছিল! কিন্তু আসল ব্যাপার হল যখন আপনি ওই সমস্ত সমালোচনাকে শিরোধার্য করে এত বছর টিকে রয়েছেন, তখন আপনি সবকিছুর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত", ওই সাক্ষাত্কারে বলেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী এই বাঙালি পরিচালক।