'দিন দ্য ডে' সিনেমা দেখে কেউ বলবে না টাকা নষ্ট হলো: অনন্ত জলিল
প্রায় আট বছর পর আসন্ন ঈদে মুক্তি পাচ্ছে আলোচিত অভিনেতা অনন্ত জলিলের নতুন সিনেমা 'দিন দ্য ডে'। বরাবরের মতো এই ছবিতেও তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা বর্ষা। তবে দিন দ্য ডে সিনেমার বড় বৈশিষ্ট্য হলো ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ছবিটি। শুটিং হয়েছে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে। পরিচালনা করেছেন ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম।
ছবিটির শুটিংসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন অনন্ত জলিল ও বর্ষা।
অনন্ত জলিল শুরুতেই বলেন, অনেকদিন বাদে আমাদের জুটির সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এটা আসলে আমার ভক্ত ও দর্শকদের জন্য ঈদের উপহার। তবে এতদিন আমাদের সিনেমা মুক্তি না পেলেও টেলিভিশনসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলাম। তাই দর্শকরা আমাদের যেমন মিস করেননি। তেমনি আমরাও না। তবে এবারের ঈদে একটা ধামাকা আসছে।
'দিন দ্য ডে' নাম নিয়ে বলেন, দিন তো দিন। এর কারণ হলো, একটা মানুষের জীবনে দিনের পর দিন কত ঘটনা ঘটে তার শেষ নেই। তাই ছবির নাম 'দিন দ্য ডে'।
জানতে চাই, দর্শকের কোন তিনটি কারণে 'দিন দ্য ডে' সিনেমাটি দেখা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
জলিল বলেন, আমি তিনটা কেন কমপক্ষে ১০টা কারণ বলতে পারব। আপাতত পাঁচটা বলি। এক, 'দিন দ্য ডে' সিনেমার মতো সিনেমা আগামীতে আর কখনো হবে কি না জানি না। তবে হলে আমি খুশি হব। দুই, ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা করা সহজ বিষয় নয়। এটা আমাদের দেশের কেউ স্বপ্নেও দেখেনি। তিন, আমরা তো এই ছবিতে আছিই। ইরানী পরিচালকের পাশাপাশি অনেক কলাকুশলী এটাতে কাজ করেছেন। চার, এই প্রথম ফোর কে রেজুলেশনে সিনেমাটি শুটিং করা হলো। পাঁচ, বাংলাদেশে এই প্রথম ডলবি অ্যাটমস প্রযুক্তিতে ছবি রিলিজ হবে। এরকম অসংখ্য কারণ আমি বলতে পারব।
তবে বর্ষা বলেন, এটা অনন্ত জলিলের সিনেমা এ কারণেও মানুষ দেখবে বলে আশা করি। কারণ এত পরিচ্ছন্ন, গোছানো ও শক্তিশালী সিনেমা অনন্ত জলিল ছাড়া আর কেউ বানাতে পারবে না
দিন দ্য ডে সিনেমার বাজেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে জানান অনন্ত। তবে এই টাকার বেশিরভাগ অংশ দিয়েছেন ইরানের প্রযোজক। ব্যবহার করা হয়েছে, ইরানের সরকারি অনেক কিছুই। ছিল ওই দেশের সহযোগিতা।
সিনেমাটি শুটিং করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন অনন্ত জলিল। সেই স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, আমার জন্য অনেক দৃশ্য ধারণই কঠিন ছিলো। আফগানিস্তানে উটের পিঠে চড়ে শুটিং করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ইস্তাম্বুলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় স্পিডবোটে শুটিং করতে হয়েছে।
এত পরিশ্রমের ছবিটি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রচারণা করছেন বেশ কিছুদিন ধরে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়েছেন, তেমনি ছুটছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।
বর্ষা বলেন, আমার বাচ্চা হওয়ার পরে আমি এই সিনেমার শুটিং করেছি। চরিত্রটাও সেরকম। ছবিতে আমি বেশ কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেছি। এটাও আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
অ্যাকশন ও বাস্তববাদী সিনেমা সবসময় পছন্দ করেন অনন্ত জলিল। প্রেমের সিনেমা খুব একটা পছন্দ না। তিনি বলেন, আমি বাস্তববাদী একজন মানুষ। তাই প্রেমে ভরপুর সিনেমা আমার ভালো লাগে না। একটা সিনেমা কী করে শুধু প্রেম নিয়ে হতে পারে এটা আমার মাথায় আসে না।
'দি দ্য ডে' সিনেমায় ভরপুর অ্যাকশন দেখবেন দর্শক এমন ইঙ্গিত দিলেন অনন্ত জলিল। বলেন, ছবিটির অনেক দৃশ্য দেখে মনে হবে সিজি করা। আসলে সেটা না। আমরা সরাসরি দৃশ্যধারণ করেছি। সেগুলো আমার জন্য ছাড়াও পুরো টিমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবুও আমরা একবিন্দু ছাড় দিইনি।
কথা শেষ করার আগে জানতে চাই, ইরানের প্রযোজকের সঙ্গে আপনাদের যুক্ত হওয়ার সুযোগটা কীভাবে তৈরি হলো?
অনন্ত বলেন, বাংলাদেশে যখন রোহিঙ্গারা আসে তখন তাদের নিয়ে ইরানি ডিরেক্টর, প্রডিউসারসহ বেশ কিছু কলাকুশলী এসে ডকুমেন্টরি তৈরি করেন। সেই সিনেমাটি বেশ কিছু ফেস্টিভালে পাঠায়। বেশ কিছু পুরস্কারও পায় না। তখন এই টিমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ইরানি অ্যাম্বাসির মাধ্যমে। ইরানের কালচারাল কনসুলার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা খুঁজে আমার সিনেমা দেখেছেন। তারপর ইনভাইট করে আমাদে নিয়ে যায় ইরানে। তখনই আমার সঙ্গে সিনেমাটি নিয়ে আলাপ হয়। আমি খুব এক্সসাইটেড ছিলাম। এটা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এভাবেই একসঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি হয়। তবে তার আগে আমাদের সম্পর্কে ইরানি অ্যাম্বাসেডর ১৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন পাঠান।
এতকিছুর কারণে ছবিটি অন্যরকম হবে এমনটাই আশা করেন অনন্ত বর্ষা। বলেন, দিন দ্য ডে সিনেমা দেখে কেউ বলবে না তার টাকা নষ্ট হলো। এটা দেখে সে তো খুশি হবেই পাশাপাশি আরও দশজনকে বলবেন সিনেমাটির দেখার জন্য।
সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের জন্য ঈদের সেরা উপহার হতে যাচ্ছে দিন দ্য ডে। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন এই তারকা দম্পতি।