মামলা, নিষেধাজ্ঞা আর সেন্সরশিপে সংকুচিত হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্প: নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলী
চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে মামলা, নানা নিষেধাজ্ঞা ও চাপ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের স্বেচ্ছাচারিতা, উপযুক্ত নীতিমালার অভাব ও প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের অযৌক্তিক ধারা ইত্যাদি কারণে চলচিত্র শিল্প সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীদের।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সম্মিলিতভাবে নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীদের আয়োজিত 'বাংলা চলচ্চিত্র বা কন্টেন্টে সেন্সরশিপের খড়গ, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন অভিযোগ করে।
উপযুক্ত নীতিমালার অভাব ও প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের অযৌক্তিক ধারার কথা উল্লেখ করে নির্মাতা জুলহাস জুবায়ের বলেন, 'আমরা নীতিমালা চাই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণমালা নয়। চলচিত্রে এইসব নানামুখী নিষেধাজ্ঞা ও চাপের কারণে কাজের আগ্রহ নষ্ট হচ্ছে। সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে চলচিত্র শিল্প।'
'কিন্তু চলচ্চিত্র এটি সম্ভাবনাময় শিল্প। সঠিকভাবে বিকাশ ঘটলে, এই শিল্প থেকে বছরে ৫০,০০০-১০০,০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব', তিনি যোগ করেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীরা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে 'হাওয়া' চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও 'শনিবার বিকেলে' চলচ্চিত্রটি তিন বছরেও সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়ার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।
আরও দাবির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সাটিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
এছাড়াও প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোন মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করারও দাবি করেন নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীরা।
সেই সাথে দাবি পূরণে ও দেশে চলচ্চিত্রের উপরে চলমান চাপের প্রতিবাদে সেপ্টেম্বরে গোলটেবিল বৈঠক ও তথ্যমন্ত্রীর কাছে স্বারক লিপি প্রদান করবে তারা।
'হাওয়া' সিনেমায় ব্যবহৃত একটি শালিক পাখি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সিনেমাটির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে 'বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২' লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হয়।
শালিক পাখি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটি 'দুঃখজনক' উল্লেখ করে মেজবাউর সুমন বলেন, 'ছবিতে খাঁচার ভেতরের পাখিটা আমি অবমুক্ত করে দিয়েছি। সিনেমা আর বাস্তবতা এক নয়। এটা খুব দুঃখজনক।'
'হাওয়ার পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ছবির শুরুতে ডিসক্লেইমারে আমরা সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছি সেটা। পাখিটির দৃশ্যধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মাণ করা।'
তিন বছরেও ছাড়পত্র না পাওয়া সিনেমা 'শনিবার বিকেলে'র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, 'আমি জানিনা কেন এত দিনেও এটির ছাড়পত্র দেয়নি সেন্সর বোর্ড। আমি এর কারণ জানতে চাই।'
চলচ্চিত্র শর্তসাপেক্ষে নির্মাণ করা যায় না উল্লেখ করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, 'কেন চলচ্চিত্রের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে চললে তো চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আমাদের গল্প বলতে পারব না।'
নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, 'আমরা এখন কাজ করতে গেলে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত থাকি। আমরা হয়ত আর চলচিত্র বানাতে পারব না।'
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, তারিক আনাম খান, মোরশেদুল ইসলাম, শম্পা রেজা, আফসানা মিমি, নুরুল আলম আতিক, মাসুম রেজা, জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, পিপলু আর খান, কামাল আহমেদ সাইমন, গাউসুল আলম শাওন, ইরেশ যাকের, আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারি মম, আফরান নিশো সহ শিল্প-সংস্কৃতির অনেকে।