১৯৬৮-তে রোমিও জুলিয়েটে 'অশ্লীলভাবে উপস্থাপন', যৌন হয়রানির মামলা অভিনেতা-অভিনেত্রীর
১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউডের সাড়াজাগানো ছবি 'রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট'। এরই এক দৃশ্যের জন্য এবার প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ছবির প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রী।
আইনি অভিযোগে ছবিটির সত্তরোর্ধ্ব দুই অভিনেতা লিওনার্ড হোয়াইটিং এবং নায়িকা অলিভিয়া হাসি বলেছেন, পরিচালক ফ্রাঙ্কো জেফিরেলি তাদের নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে উৎসাহিত করেছিলেন; যদিও অভিনয়ের আগে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, কোনো দৃশ্যে তাদের নগ্ন দেখানো হবে না।
সে সময় লিওনার্ডের বয়স ছিল ১৬ আর অলিভিয়ার ১৫।
আইনি অভিযোগের খাতায় নাম এসেছে হলিউডের অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ট পিকচার্স-এর।
প্যারামাউন্ট এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ছবির দুই অভিনেতা এখন ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন বলে বিবিসির খবরে জানা গেছে।
ছবিটির পরিচালক ফ্রাঙ্কো জেফিরেলি গত হয়েছেন ২০১৯ সালে। লিওনার্ড আর অলিভিয়ার ভাষ্যে, জেফিরেলি প্রথমে তাদের বলেছিলেন যে, শয্যাদৃশ্যে অভিনয়ের জন্য তাদেরকে স্কিন কালারের অন্তর্বাস পরানো হবে।
অথচ দৃশ্যটিতে অভিনয়ের দিন সকালে পরিচালকের নির্দেশে তাদের গায়ে কেবল বডি-মেকআপ রাখা হয়। পরিচালক এরপর তাদের জানান, ক্যামেরায় তাদের শরীরের কোনো অংশ দেখানো হবে না।
কিন্তু ছবি রিলিজের পর দেখা যায়, দৃশ্যটিতে লিওনার্ডের পশ্চাৎদেশ এবং অলিভিয়ার দেহের উন্মুক্ত অংশ দেখানো হয়েছে।
মামলায় অভিনেতারা জানিয়েছেন, পরিচালক তাদের এই দৃশ্যে অভিনয় করতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাদের অবশ্যই নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে, নতুবা ছবিটি সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হবে। এমনকি তাদের ক্যারিয়ারও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গল্পের চাহিদা অনুযায়ী, বডি মেকআপে নগ্ন হয়ে অভিনয় করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই- এমন ভাবনা থেকেই তারা দৃশ্যটিতে অভিনয় করেছিলেন বলে জানান।
প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং প্রতারণার মামলা এনেছেন তারা।
মামলায় নামী এই হলিউড স্টুডিওর বিরুদ্ধে দুই কিশোর অভিনেতার যৌন শোষণ এবং কিশোর-কিশোরীদের নগ্ন ছবি বিতরণের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
বলা হয়েছে, লিওনার্ড হোয়াইটিং এবং অলিভিয়া হাসির সাথে যেমন আচরণ করা হয়েছে, তাতে তারা কয়েক দশক ধরে মানসিক যাতনার শিকার হয়েছেন।
'রোমিও এন্ড জুলিয়েট' ছিল এক বিরাট 'হিট'। শেক্সপিয়ারের নাটক নিয়ে পড়াশোনা করা পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ছবিটি বারবার দেখানো হয়েছে।
সেরা পরিচালক এবং সেরা ছবি সহ চারটি বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল এটি; পরে সিনেমাটোগ্রাফি এবং কস্টিউম ডিজাইনের জন্য দু'টিতে জিতে নেয়।
প্রশ্ন জাগে, এত বছর পর কেন মামলা!
এর উত্তর দিয়েছেন দুই অভিনয়শিল্পীর বিজনেস ম্যানেজার টনি ম্যারিনোজি।
বিষয়টি আগে জানালে তা তাদের ক্যারিয়ারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারতো, হয়তো তাদের বিশ্বাসও করা হতো না। এমন আশংকা থেকেই এ বিষয়ে আগে মুখ খুলেননি তারা, জানান টনি।
"এখন হ্যশট্যাগ মি টু আন্দোলন এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ এসেছে, কিন্তু তখন পরিস্থিতি এরকম ছিল না।"
এই জুটির আইনজীবী সলোমন গ্রেসেন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, "অপ্রাপ্তবয়স্কদের নগ্ন ছবির প্রদর্শন একেবারেই বেআইনি।
"ষাটের দশকে এরা কৈশোরে ছিল, অত কিছুর বোধও ছিল না। তারা বোঝেনি কী আঘাত আসতে চলেছে!"
যদিও ২০১৮ সালে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী অলিভিয়া হাসি বিতর্কিত দৃশ্যটির পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
পরিচালক জেফিরেলির শট নেওয়ার নৈপুণ্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আমার বয়সী কেউ আগে এমন দৃশ্যে অভিনয় করেনি। ছবিটির জন্যই এটির দরকার ছিল।"
একই বছর ফক্স নিউজের আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার সে দৃশ্যটি 'ট্যাবু' ছিল তবে ইউরোপীয় চলচ্চিত্রগুলোতে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
"এটা এমন কোনো বড় ব্যাপার ছিল না। আমরা দু'জনেই একে অপরের সাথে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে অভিনয় করেছি", যোগ করেন তিনি।